আমি একটি চিঠি। মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য অক্ষরের যে লিখন পদ্ধতি সেটা আমাকে ঘিরে।এক সময় চিঠি লিখা ছিল খুব জনপ্রিয়।বন্ধু-বান্ধবী,মা-বাবা,অত্মীয় সজন সবার কাছে চিঠি আগে চিঠি আসতো। আপনজনের কাছে বিভিন্ন সংবাদ প্রেরণে সকলেই আগে চিটি-পত্র লিখতো।অনেকে চমৎকার চমৎকার ভাষা ব্যবহার করতো চিঠিতে।প্রাণ জুড়িয়ে যেত সেসব চিঠি পড়ে। আমার মুল্য অনেক।বার্তা
প্রেরণে আমার জুড়ি নেই। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আমি ব্যবহৃত হই। যে
কোন প্রকার সংবাদ পৌঁছানো আমি ছাড়া মানুষের উপায় নেই। দেশে-বিদেশে
সব জায়গায় আমার সমান পদচারণা।প্রিয়তমার কোমল হাতের লেখাগুলিকে আমিই তুলে ধরি প্রেমিকের চোখের
সামনে।প্রিয়াকে মুগ্ধ করতে রং-বেরঙের খামের পোশাক পড়িয়ে আমাকে পাঠানো হয়।সেই চিঠির ভিতরে গোলাপের দু’একটি পাঁপড়ি দিতেও ভূল কোরতো না প্রেমিক-প্রেমিকারা।অনেকে নিজের আঙ্গুল কেটে রক্ত দিয়েও চিঠি লিখার প্রমাণ দিয়েছে। আহ্! সেকি প্রেম! ভুলা যায় না অত সহজে। অন্যদিকে সন্তান পিতাকে। পিতা-মাতা তাদের আদরের সন্তানকে স্নেহ ভালবাসা পৌঁছে দিতেও আমার সাহায্য নেয়।বন্ধু লিখে বন্ধুকে মনের আবেগ ঢেলে।কি শহরে বা অয পাড়াগাঁয়ে নয়তো প্রবাসে কোথায় আমি নই? প্রেমিক-প্রবর যখন লাল,বেগুনী,সবুজ রঙের কালিতে কালারিং প্যাডে আমাকে লিখে আমি তখন লজ্জায় লাল হই খানিকটা!আচলে মাথা গুঁজি, ঘুমটা টানি!! আর প্রাপক যখন সেই চিঠি যত্ন সহকারে পড়তে থাকে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি। ভাবি জীবনটা আমার সার্থক!! আমাকে এতটা মূল্যায়ন করে মানুষ?
কিন্তু আফসোস! আমার বিলাপ করতে ইচ্ছে করে। বড়ই দুঃখের ও বেদনার বিষয় যে,সবাই আমাকে আজ ভুলতে বসেছে। আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মনুষ্য প্রাণী।
কেউ আর চিঠি লিখে না। আমার আজ কদর কম।সবাই আজকাল ইমেইল ব্যবহার করে।ফেসবুকে লিখে
আমার কাজটা চুকিয়ে নেয়। এমতো কথা ছিল না? জব টা তো আমার!
তাইনা? কেন এমন নির্মমতা? কি দূষ ছিল আমার? এটা অত্যন্ত পীড়া দায়ক। আমিতো সারা
জীবন মানুষের কল্যাণেই লেগেছিলাম। তাহলে আমার উপর এই অবিচার কেন? কেনই বা মনুষ্যকুল আমাকে এভাবে ছুড়ে ফেলে দিল? এক
জামানা ছিল প্রিয়তমা চিঠি লিখতে ভাষা খুঁজতে খুঁজতে ২/৩ দিন
পার করে দিত।তারপর শেষ হত সেই পত্র লিখা।ধীরে ধীরে লিখনীর আড়ালে প্রিয়ার হাতের
চুড়ির “চুক-চিক”…আওয়াজ শুনতে পেতাম।আমি পুলকিত হতাম সেই
আওয়াজে। আবার অনেক প্রেমিক কথার মালা কুড়িয়ে ভাষার তাজমহল গেঁথে লিখে ফেলতো ৫/৬ পৃষ্ঠার চিঠি। ১৯৮৪ সালে গোবিন্ধলের (লুৎফর রহমান মুক্কা)
নামে এক পুরোনো বন্ধু তো প্রেমপত্র লিখে আমাকে বানিয়ে ফেলল ৭৩ পাতা।ভাষা
থেকে ভাষান্তরে ভাসতে লাগলাম আমি। ক্লাসের সকল বন্ধুরা শোনে সেকি হৈ-হুল্লো্র!! আর আজকাল সবাই সাদা-মাটা ভাবে লিখে টুইটারে/FB তে ২/১ লাইন। বাস লেখা শেষ।প্রেমপত্র এখানেই পরি
সমাপ্তি। কেমন যেন
শর্টকাট ভাব। এভাবে কি প্রেম হয়???? বন্ধু “এডভোকেট খোরশেদ আলম” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী থাকা
কালীন আমাকে প্রায়শঃ লিখতো।কি চমৎকার সেই চিঠি। কি ভাষার বুনন সেই লেখায়! সত্যি তা ভুলার নয়। অন্য
দিকে আবার বিশ্বে পদার্পণ করেছে বেরসিক মোবাইল ফোন, স্মার্ট
ফোন। সারাদিন শুধু ম্যাসেজ আর ম্যাসেজ। আর হেডফোন লাগিয়ে চলে দিনের পর দিন কথা আর
কথা।এ প্রযুক্তির যোগে দুনিয়ায় মুঠোফোন এসে আমার সর্বনাস করেছে।কেউ আর চিঠি
লিখতে উদ্বুদ্ধ হয় না।মেনে নিলাম মেইল করে,টুইট করে কাজ চালিয়ে নেয়া যায়।কিন্তু সাদা কাগজে কালো অক্ষরে প্রণয়ের ভাষা
সম্বলিত লেখা একটি চিঠি প্রিয়তমাকে যতটা আকৃষ্ট করতে পারে, যতটা বিকশিত করতে পারে ততটা কি একটি মেইল করতে পারে?? কখনো না। যদি কোন প্রেমিক ইচ্ছে করে যে, জরির কলমে
জাফরানের কালি দিয়ে হীরের অক্ষরে স্বর্ণে পাতে এক চিঠি লিখে প্রিয়জনকে উপহার দিবে
তাও দিতে পারবে। তাই বলে কি ইলেক্ট্রো মিডিয়ায় তা সম্ভব? কোন
ভাবেই সম্ভব না।অতএব চিঠির গুরুত্ব সীমাহীন। আমাকে ভুলে গেলেও আমি অনেকটা অমর,
চির যৌবণা। আমাকে লিখে ছাত্র-ছাত্রীগণ তাদের
শব্দের বানান শিখতে পারে।ভাষা শিখতে পারে।ব্যাকরণ শিখতে পারে।হাতের লেখা সুন্দর
করতে পারে।আমি কতটা উপকারী!!! আমাকে লিখে যখন পোষ্ট বক্সে
পোষ্ট করে রানার আমাকে সযত্নে নিয়ে ছুটে চলে প্রাপকের অভিমুখে। তাইতো কবি “সুকান্ত ভট্টাচার্য” আমাকে পেয়ার মহব্বত করে লিখেছিল,
----- “রানার
ছুটেছে তাই ঝুম্ঝুম্ ঘন্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার !”……
এছাড়াও আমাকে নিয়ে আরও অনেক তথ্য আছে। আমাকে পোষ্ট করতে বা প্রাপকের ঠিকানায় পৌঁছে দিতে সর্ব প্রথম ইংল্যান্ডে ১৫১৬ সনে “রয়্যাল মেইল” নামে প্রথম পোস্ট অফিস শুরু হয়।পরবর্তিতে “দ্বিতীয় চার্লস” ১৬৬০ খ্রীস্টাব্দে “জেনারেল পোস্ট” অফিস চালু করেন।আর স্ট্যাম্পও চালু হয় প্রথম বিলেতেই ১৮৪০ সালে। ডাকবাক্স চালু হয় ১৮৫০ সালে। আগে ঘোড়াগাড়ির মাধ্যমে ডাক চালু করা হয়েছিল ১৭৮৪ সালে এবং ১৮৩০ সালে ইনভেলাপের সূচনা হয়। তারও বহু আগে আমাকে বিতরণের জন্য কবুতরকে পত্র বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হত। কালিদাস পণ্ডিত তার “মেঘদূত” গ্রন্থে, প্রচীনকালে সংবাদ আদান-প্রদানে ও বার্তা পাঠাতে মৌসুমি মেঘ এবং বাতাসকে দূত হিসেবে ব্যবহার করার কল্পকাহিনী লিখেছেন। ভারতবর্ষে সর্ব প্রথম ডাক চালু হয় ১৭৭৪ সালে এবং ভারতের সিন্ধু প্রদেশে প্রথম ডাক টিকেট চালু হয় ১৮৫২ সালে। এরও বহু আগে ১২০৬ দিল্লির প্রথম সুলতান কুতুবউদ্দিন ডাক ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন বলে জানা যায়। কুতুবউদ্দিন দিল্লি থেকে বাংলা পর্যন্ত ডাক ব্যবস্থা চালু করেন।
বৃটিশ ভারত-পাকিস্তান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের
ডাক বিভাগের ইতিহাস প্রায় ১৫০ বছরের। জিপিও ভবনের
তৃতীয় তলায় “ঢাকা জেনারেল ডাকঘর” নামে একটি জাদুঘরও আছে।বিশ্ব ডাক সংস্থার সদস্য ১৯১ টি দেশের ডাকটিকিটের প্রদর্শনী আছে এখানে।
প্রতিবছর ৯ অক্টোবর পালন করা হয় বিশ্ব ডাক দিবস। সবই কেবল এই অধমের জন্য। কিন্তু
বাংলার মানুষ আমাকে ভুলে গেলেও আমি থাকবো চির স্মণীয়-বরণীয় হয়ে এই বিশ্ব ব্রম্মান্ডে।রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার !”……
এছাড়াও আমাকে নিয়ে আরও অনেক তথ্য আছে। আমাকে পোষ্ট করতে বা প্রাপকের ঠিকানায় পৌঁছে দিতে সর্ব প্রথম ইংল্যান্ডে ১৫১৬ সনে “রয়্যাল মেইল” নামে প্রথম পোস্ট অফিস শুরু হয়।পরবর্তিতে “দ্বিতীয় চার্লস” ১৬৬০ খ্রীস্টাব্দে “জেনারেল পোস্ট” অফিস চালু করেন।আর স্ট্যাম্পও চালু হয় প্রথম বিলেতেই ১৮৪০ সালে। ডাকবাক্স চালু হয় ১৮৫০ সালে। আগে ঘোড়াগাড়ির মাধ্যমে ডাক চালু করা হয়েছিল ১৭৮৪ সালে এবং ১৮৩০ সালে ইনভেলাপের সূচনা হয়। তারও বহু আগে আমাকে বিতরণের জন্য কবুতরকে পত্র বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হত। কালিদাস পণ্ডিত তার “মেঘদূত” গ্রন্থে, প্রচীনকালে সংবাদ আদান-প্রদানে ও বার্তা পাঠাতে মৌসুমি মেঘ এবং বাতাসকে দূত হিসেবে ব্যবহার করার কল্পকাহিনী লিখেছেন। ভারতবর্ষে সর্ব প্রথম ডাক চালু হয় ১৭৭৪ সালে এবং ভারতের সিন্ধু প্রদেশে প্রথম ডাক টিকেট চালু হয় ১৮৫২ সালে। এরও বহু আগে ১২০৬ দিল্লির প্রথম সুলতান কুতুবউদ্দিন ডাক ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন বলে জানা যায়। কুতুবউদ্দিন দিল্লি থেকে বাংলা পর্যন্ত ডাক ব্যবস্থা চালু করেন।
Fazlur Rahman
0534580722|0562998047|
Email:frahmanapple@yahoo.com|
Twitter:@Frahmantwittman|
Skype:frahman67