আজ ২১ ফেব্রুয়ারী। অমর একুশে।মহান শহীদ দিবস। ১৯৫২ থেকে
২০১৭ সাল। সুদীর্ঘ পথ চলা।২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জনগণের
গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। ইহা শহীদ দিবস ও
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও
এখন পরিচিত। বাংলা ভাষার
সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব
পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন
দমনে পুলিশ ১৪৪
ধারা জারি করে ঢাকা শহরে সমাবেশ-মিছিল ইত্যাদি বে-আইনী ও
নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৫২ সালের ২১
ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু
রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা
অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক,সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউর, অহিদুল্লাহ
সহ আরও অনেকে। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার
অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
সেজন্য প্রতি বছরই
এই একুশে
ফেব্রুয়ারি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে শহিদ দিবস হিসেবে
উদযাপন করা হয়ে থাকে। মায়ের
ভাষাকে রক্ষা করতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে
দিয়েছে এ জাতি। এ অধিকার একটা জাতি লাভ করে স্বয়ং
স্রষ্টা থেকে। তাইতো “মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদী সাহেব” এক বক্তিতায় বলেছেন একুশে ফেব্রুয়ারি পালন
করা জরুরী এবং বাংলা ভাষা আল্লাহপাক এর দান। ভাষার জন্য জীবন দান এ বিরল আত্মত্যাগকে
সম্মান জানাতে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা
করে।ইউনেস্কোর ঘোষণায় বলা হয়- 21 February
is proclaimed international mother language day througout the world to
commemorate the martyrs who sacrificed their lives on this day in 1952.
এখন তাই
প্রতিবছর এই দিনটি বিশ্বের ১৮৮টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। বলতে গেলে এটা এখন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হয়ে গেছে। পৃথিবীতে বাংলাদেশই একটিমাত্র দেশ যারা নিজেদের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন।
বাংলা
ভাষাকে রক্ষা করেছেন। ভাষার জন্য যারা আজ থেকে ৬৫ বছর আগে একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রাণ
দিয়েছেন তাদের নাম যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন অমর হয়ে থাকবে এই বিশ্বব্রম্মান্ডে। আমি
গর্বিত যে আমার পাশের গ্রাম বলধারা ইউনিয়নের পাড়িলের “রফিক নগর” গ্রামে জন্মেছিলেন বীর শহীদ রফিক সাহেব। রফিক
উদ্দিন ১৯২৬ সালের ৩০ শে অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করেন ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন। রফিক উদ্দিনের পিতার নাম
আবদুল লতিফ ও মাতার নাম রাফিজা খাতুন। তাঁর পিতা আবদুল লতিফ ছিলেন ব্যবসায়ী,
কলকাতায় ব্যবসা করতেন।রফিকরা ছিল পাঁচ ভাই ও দুই বোন। ভাইদের মধ্যে
রফিক ছিল সবার বড়। চার ভাই,
আবদুর রশীদ (১৯৩১-১৯৮৭) আবদুল খালেক (১৯৩৪),
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম (১৯৪৩-১৯৭২), খোরশেদ আলম (১৯৪৭)
এবং বোন আলেয়া বেগম (১৯৩৮) ও জাহানারা বেগম (১৯৪৫)। রফিক ছিল পিতা-মাতার প্রথম সন্তান। শৈশবে গ্রামের স্কুলেই তিনি লেখাপড়া
করেন। তার নামানুসারেই গ্রামটির নাম রাখা হয়েছে রফিক
নগর।এখানে শহীদ রফিকের নামে একটি “স্মৃতি যাদুঘর”
রয়েছে। প্রতিবছরই একুশে ফেব্রুয়ারীতে এখানে মেলা বসে। মেলায় হাজার হাজার নারী পুরুষের ঢল নামে।আমাদের মানিগঞ্জ শহরের মেইন রাস্তাটিও শহীদ রফিকের নামেই “শহীদ রফিক সড়ক” রাখা হয়েছে।
মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ দিন ভোরে
সর্বস্তরের মানুষ খালি পায়ে অংশগ্রহণ করে এবং শহীদ মিনারে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধা
নিবেদন ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। দোয়েল চত্বর, চানখাঁরপুল, টিএসসি,
পলাশী মোড়
থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ী চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সারাদিন মানুষ শোকের
চিহ্নস্বরূপ কালো ব্যাজ ধারণ করে। এছাড়া আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মার
মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়।
বাংলাদেশ
টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দিবসটির
তাৎপর্য্য তুলে ধরা হয়। দৈনিক সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে আয়োজিত অমর একুশে
গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হয় পুরো ফেব্রুয়ারি মাস ব্যাপী। সরকার বাংলা ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একুশে পদক প্রদান করে থাকে।
একুশ নিয়ে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে
পারি গানটি লিখেন “আবদুল গাফফার
চৌধুরী” । গানটিতে
প্রথমে সুরারোপ করেন আব্দুল লতিফ। পরবর্তিতে আলতাফ মাহমুদ আবার নতুন করে সুরারোপ করেন। সেই থেকে ওটা হয়ে যায় একুশের গান। বর্তমানে আলতাফ মাহমুদের সুর করা গানটিই
গাওয়া হয়। জহির রায়হান তাঁর “জীবন থেকে নেয়া” সিনেমায় এ গানটি ব্যবহার করার পর এর জনপ্রিয়তা আরো বেরে যায়। এ গানটি সুইডিশ এবং জাপানি ভাষায় অনুবাদও হয়েছে। সেখানে
তারাও গায় এই গানটি।
২১
ফেব্রুয়ারি আমাদের অহংকার। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক।এটাকে বাঙালি ভুলে থাকতে
পারে না।
সবশেষে বলতে চাই বিভিন্ন
ভাষা শিক্ষালাভ করা চর্চা করা দূষের কিছু নয়।তাতে জ্ঞান বাড়ে।কিন্তু নিজের
মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে নয়।নিজের মাতৃভাষা সঠিক ও শুদ্ধভাবে প্রয়োগ-ব্যবহার-অনুশীলন করা প্রয়োজন সবার আগে।প্রত্যাশা
রাখি আমরা সবাই শুদ্ধ ভাবে বাংলা উচচারণে কথা বলবো, নিজের সন্তানদের শুদ্ধ বাংলা শিক্ষা দিব। আমরা সবাই গুড মর্নিং না বলে শুভ সকাল-
শুভ সন্ধ্যা-শুভ রাত্রি এভাবে বলতে অভ্যস্ত হবো। ধন্যবাদ সবাইকে। শুভ সকাল হে মহান “শহীদ দিবস”।
ফজলুর রহমান, সৌদি আরব।
Cell Phone:00966534580722
Email: frahmanapple@yahoo.com
Twitter:@Frahmantwittman
Cell Phone:00966534580722
Email: frahmanapple@yahoo.com
Twitter:@Frahmantwittman