Saturday, November 26, 2016

"ফিদেল ক্যাস্ট্রো ছিলেন বিশ্বের একজন মহান নেতা" ( Fidel Castro was a Great Leader in the world)

যদি বলি কোন দেশের নাম লিখতে ইংরেজী প্রথম ABC তিনটি অক্ষরই প্রয়োজন হয় তাহলে বলতে হবে সে দেশটির নাম কিউবা। হাঁ কিউবার (CUBA) সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফিদেল কাস্ট্রোর (“Fidel Castro”) কথাই আজকের প্রসঙ্গ। ফিদেল কাস্ত্রোর ১৯২৬ সালের ১৩ই আগস্ট কিউবার পূর্বাঞ্চলে বিরান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন স্প্যানিশ বংশোদ্ভুত । ফিদেল কাস্ট্রো ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এবং এরপর ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত কিউবার মন্ত্রী পরিষদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০০৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি কিউবার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন।তিনি হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন।তার মত মহান বিপ্লবী নেতা সারা বিশ্বে খুব কমই আছে। বিংশ শতাব্দির মহানায়ক, সমাজতন্ত্রী বিপ্লবী কিউবান রাজনৈতিক দলের নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। তার শাসনের সময় কিউবাকে তিনি উপহার দিয়েছেন চমৎকার শিক্ষার হার, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সে কারণেই পৃথিবীর অনেক দেশ তাকে ঈর্ষার চোখে দেখেছে। তার উন্নতি, উন্নত শাসন ব্যবস্থা বিশ্বের অনেকে দেশই সইতে পারেনি।
আমেরিকার সাথে ছিল তার জনম জনমের দুশমনী। ল্যাটিন আমেরিকায় মার্কিন প্রভাব-আাধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন ফিদেল কাস্ট্রো সারা জীবন। যে কারণে কাস্ট্রোকে বহুবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বহু বাধা বিপত্তির মুখে অটল থেকেছেন আজীবন। ফিদেল কাস্ত্রোকে ৬৩৮ বার হত্যার চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সবাইকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কিউবার শাসন ক্ষমতায় ছিলেন পাকাপুক্ত ভাবে ফিদেল কাস্ট্রো। তাকে অনেকবার জেলে যেতে হয়েছে।অন্যায়ভাবে তাকে জেলে দিলেও রাখতে পারেনি। সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে ১৯৫৫ সালের মে মাসে জেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। কারণ কাস্ত্রো ছিলেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
কাস্ট্রোকে হত্যার জন্য মার্কিন সিআইএ তাঁর চুরুটের মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য রেখেছিল। সেই চুরুটের মধ্যে যে পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা হয়েছিল তাতে তাঁর মাথা উড়ে যেতে পারতো। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল।তাঁর খানার মধ্যেও বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাঁর ব্যবহৃত কলমে বিষযুক্ত সুঁচ রেখে ও পোশাকে জীবাণু ঢেলে রেখে তাঁকে হত্যার চেষ্টা চালায় মার্কিন প্রশাসন। তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী মিরতাকেদিয়ে বিষাক্ত ক্যাপসুল প্রয়োগে কাস্ট্রোকে হত্যার চেষ্টা চালায় সিআইএ। কিন্তু সেখানেও মার্কিন সিআইএ এবং স্ত্রী মিরতা বিফল হয়েছে।বলা হয়ে থাকে রাখে আল্লাহ্‌ মারে কে
বাংলাদেশের সাথেও ছিল ফিদেল কাস্ট্রোর ছিল ভীষণ সু-সম্পর্ক। ১৯৭১ সনের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিল ফিদেল কাস্ট্রো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে ছিল তার চরম বন্ধুত্ব। সে কারনেই ১৯৭৪ সালের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সভায় আলজেরিয়ায় কিউবার মহান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে বৈঠক হয় বঙ্গবন্ধুর। সেখানে প্রথম দেখে ফিদেল কাস্ট্রো বলেছিলেন, "I have not seen the Himalayas. But I have seen Sheikh Mujib. In personality and in courage, this man is the Himalayas. I have thus had the experience of witnessing the Himalayas." (“আমি হিমালয় দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমান। এভাবে আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতাই লাভ করলাম।)

আজ ২৬/১১/২০১৬ সকালে সি.এন.এন থেকে এক নোটিফিকেশন পেলাম ফিদেল কাস্ত্রো মারা গেছেন। ফিদেল কাস্ট্রো কিউবার স্থানীয় সময় গতকাল ২৫/১১/২০১৬ শুক্রবার রাতে হাভানায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বাংলাদেশের জন্গণ আজীবন স্মরণ রাখবে এই অকৃতিম বন্ধু ফিদেল কাস্ট্রোকে।

Thursday, November 24, 2016

"একজন সৈয়দ শামসুল হক" ( A Syed Shamsul Haque )

একজন  সৈয়দ শামসুল হক একজন  বিশিষ্ট সাহিত্যিক, কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, এক কথায় বহুমাত্রিক লেখক  আরেক উপাধি তিনি সব্যসাচী লেখকসৈয়দ শামসুল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭শে ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে । জনাব শামসুল হক ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে ম্যাট্রিক করেন তারপর বাড়ীতে কাউকে  না বলে ১৯৫১ সালে  বম্বে পালিয়ে যান। সেখানে এক বছরের মত এক ফিল্ম প্রডাকশন হাউসে সহকারী হিসেবে কাজ করেন ১৯৫২ সালে  দেশে চলে আসেন এবং জগ্ননাথ কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তি হনকলেজ পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি শাখায়  ভর্তি হন ১৯৫৪ সালেঅতপর স্নাতক পাসের আগেই ১৯৫৬ সালে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে সেখান থেকে বেরিয়ে যান তিনি প্রখ্যাত লেখিকা ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
সৈয়দ শামসুল হক বেশ কিছু সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেন।" ক খ গ ঘ ঙ" “বড় ভাল লোক ছিল” এসব  বিখ্যাত সিনেমার কাহিনী  তাঁরই লেখা।এই সিনেমার  জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তিনি কিছুকাল  লন্ডনে  বিবিসির বাংলা খবর পাঠক ছিলেন। ১৯৭১ সালে  ১৬ই ডিসেম্বরে পাকিস্তানী বাহিনী যখন আত্মসর্মপণ করে সেই সংবাদটিও পাঠ করেছিলেন। তিনি বিবিসির বাংলা প্রযোজক হিসেবে কাজ  করেন ছয় বৎসর। সৈয়দ হকের জীবনের প্রথম কবিতা ১১/১২ বছর বয়সে লেখা "আমার ঘরে জানালার পাশে গাছ রহিয়াছে/ তাহার উপরে দুটি লাল পাখি বসিয়া আছে" এবং জীবনের শেষ কবিতা রচনা করেন হাসপাতাল বেডে।সে কবিতার নাম- “আহা, আজ কি আনন্দ অপার এই কবিতাটি  তিনি লেখেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে সৈয়দ হকের রচিত বেশ কিছু বই পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।তাঁর লেখা উপন্যাস “খেলারাম খেলে যা” সহ  বেশ কিছু বই আমার সংগ্রহেও আছে। পড়তে ভাল লাগে ভীষণভাবে তাঁর বইয়ের সংখ্যা দুই শতাধিক হবে তিনি সাহিত‌্যের সকল ক্ষেত্রে বিচরণ করেছেন। ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, শিশুসাহিত্য, নাটক, প্রবন্ধ কি না লিখেছেন তিনি।সৈয়দ শামসুল হক স্বাধীনতা পুরস্কার সহ একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সৈয়দ শামসুল হকের বেশ কিছু গান বাংলার সংগীত জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে। যেমন ফেরদৌসী রহমানের গাওয়া একটি  চমৎকার গান “যার ছায়া পড়েছে মনেরও আয়নাতে, সে কি তুমি নও, ওগো তুমি নও” এ গানটি লিখেছেন জবাব সৈয়দ হক।বড় ভালো লোক ছিলো” সিনেমার দুটি গান- “হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস” এবং “তোরা দেখ দেখ দেখরে চাহিয়া, রাস্তা দিয়া হাঁইটা চলে রাস্তা হারাইয়া তারপর রুনা লায়লার কন্ঠে চমকা একটি গান “পাগল পাগল মানুষগুলো পাগল সারা দুনিয়া, কেহ পাগল রূপ দেখিয়া, কেহ পাগল শুনিয়া”  বশীর আহমেদের গাওয়া সেই বিখ্যাত গান- অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়” এসব কালজয়ী গানগুলি   সৈয়দ শামসুল হকেই লিখেছিলেন। তাঁর সকল  সৃষ্টি অমর। এছাড়া  সৈয়দ হকের বিখ্যাত উপন্যাস নিষিদ্ধ লোবান” অবলম্বনে তৈরী হয়েছে “গেরিলা” সিনেমাটি যাহা জনাব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ(বাচচু) পরিচালনা করেছেন।

সৈয়দ শামসুল হক ২০১৬ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর  ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

Monday, November 21, 2016

জাতিসংঘের আট মহাসচিব গণের তালিকা ( List of United Nations Secretaries-General-8 )

১৯৪৫ সালে ৫১টি রাষ্ট্র নিয়ে জাতিসংঘ  প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘের  সর্বোচ্চ পদ মহাসচিব। জাতিসংঘের মহাসচিব “জাতিসংঘ সচিবালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন এছাড়া তিনি জাতিসংঘের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে নিয়োজিত থাকেন জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব  বান কি মুন  তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার  নাগরিক তিনি   ২০০৭ সালের ১লা জানুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১১ সালে ৩১শে ডিসেম্বর প্রথম দফার মেয়াদকাল শেষ করেন পরবর্তীতে আবার ২০১১  সালের ২১শে  জুন   দ্বিতীয় বারের মত জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।
বান কি মুন জাতিসংঘের   অষ্টম মহাসচিব এ যাবৎ ১৯৪৬
সন থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৮ জন  জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন প্রথম মহাসচিব পদে নির্বাচিত হন “টৃগভে লি”  তবে "গ্লাডউইন জেব" নামে  আমেরিকার নাগরিক একজন মহাসচিব  ছিলেন।কিন্তু তিনি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব  ১৯৪৫ সালের  ২৪ অক্টোবর  থেকে ১৯৪৬ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী  পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন।তবে অফিসিয়ালি কাগজে কলমে নরওয়ের অধিবাসী  মি: টৃগভে লি-  ই জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব। তিনি ১৯৪৬ ২রা ফেব্রুয়ারী থেকে ১৯৫২ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় মহাসচিব ড্যাগ হামারশোল্ড তিনি ১৯৫৩ সনের ১০ই এপ্রিল থেকে ১৯৬১ সনের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  দায়িত্ব পালন করেন।তিনি ছিলেন সুইডেনের অধিবাসী। তিন নাম্বার মহাসচিব ছিলেন বার্মার “ইউ থান্ট সময়কাল ১৯৬১ নভেম্বর ৩০ থেকে  ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর । চতুর্থ মহাসচিব “কোর্ট ওয়াল্ডহেইমতিনি ১৯৭২ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে ১৯৮১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত  দায়িত্ব ছিলেন।তিনি ছিলেন অস্ট্রিয়ার   অধিবাসী। পঞ্চম মহাসচিব হিসেবে ছিলেন পেরুর
হাভিয়ের পেরেজ ডে কুয়েইয়ারদায়িত্বকাল ১৯৮২ সালের ১লা  জানুয়ারী থেকে  ১৯৯১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ষষ্ট মহাসচিব  “বুট্রোস ঘালি তিনি মিশরের  নাগরিক। বুট্রোস ঘালি দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৯২ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে ১৯৯৬ সালের ৩১শে ডিসেম্বর সপ্তম ব্যক্তিত্ব হলেন "কোফি আনান" । তিনি দায়িত্ব ছিলেন  ১লা  জানুয়ারী ১৯৯৭ থেকে ডিসেম্বর ৩১, ২০০৬ পর্যন্তকোফি আনান  ছিলেন ঘানার অধিবাসী। এই সর্বমোট আট জন জাতিসংঘের মহাসচিব বর্তমান মহাসচিব বান কি মুন এর মেয়াদকাল শেষ হলে নতুন  মহাসচিব হিসেবে আসবেন পর্তুগালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী “আন্তোনিও গুতেরেস আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো এমনটাই বলছে।

ফজলুর রহমান
সৌদি আরাবিয়া
২১/১১/২০১৬


Fazlur Rahman
0534580722|0562998047|
Email:frahmanapple@yahoo.com|
Twitter:@Frahmantwittman|
www.fazlupedia.blogspot.com|Skype:frahman67 

Thursday, November 17, 2016

বাংলার আধুনিক কবি “জীবনানন্দ দাশ”(The Modern poet of Bengal “Jibananada Das” )


"আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে--এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়
-- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল
-ছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হ'
--কিশোরীর--ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলায় নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;

আজকের প্রসঙ্গ আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়েকবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত এবং দাদার নাম সর্বানন্দ দাশগুপ্ত জীবনানন্দ দাশের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ঢাকার বিক্রমপুরের অধিবাসী তাঁর দাদা সর্বানন্দ দাশগুপ্ত  বিক্রমপুর থেকে স্থানান্তর হয়ে  বরিশালে বসবাস শুরু করেনজীবনানন্দ দাশকে বলা হয় রূপসী বাংলার কবি, প্রেমের কবি এবং বাংলা সাহিত্যের একজন শুদ্ধতম কবিতিনি একাধারে কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপকতিনি বাংলা সাহিত্যের একজন আধুনিক কবি ছিলেন তিনি ১৯১৫ সালে ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক অতপর  দুই বছর পর আই.  পাশ করেন এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজীতে(অনার্স) বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯২১ সালে  কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে এম. . করেন(দ্বিতীয় বিভাগ)তিনি কিছুদিন পড়েছিলেন আবার পরে সেটা বাদ দেনকবি জীবনানন্দ দাশ ১৯৩০ সনের ৯ই মে  লাবণ্য দেবীকে বিবাহ করেন লাবণ্য দেবী তখন ইডেন কলেজের ছাত্রী বিয়েটি হয়েছিল ঢাকার সদরঘাট  রামমোহন লাইব্রেরিতে।
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় উঠে এসেছে বাংলার প্রকৃত রূপ তাঁর কবিতায় গ্রাম-বাংলার নদী,মাঠ-ঘাট-ঘাস-লতা-পাতা-বন-জঙ্গল-পাখি-আকাশ-বাতাস-মাটি সবই স্থান পেয়েছে কি নেই জীবনানন্দ দাশের কাব্যেবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ  রূপ তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে তাঁর কবিতায় শব্দ চয়ন-উপমা-প্রকৃতিকে ঢেলে সাজানো এক নজীরবিহীন নৈপুন্য  কবি বুদ্ধদেব বসু, অনেক লিখেছেন জীবনানন্দ দাশকে নিয়েবাংলার রূপে মুগ্ধ হয়ে  জীবনানন্দ দাশ এভাবে বলেছেন যে,

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,
তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর 

জীবনানন্দ দাশ বাংলার এক ক্ষনজন্মা কথাসাহিত্যিকতাঁর সাহিত্যের ভান্ডার এতটাই সমৃদ্ধ যে যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন বাংলা সাহিত্যে তিনি বিরাজ করবেন অত্যন্ত দাপটের সাথেতাঁর কবিতা বনলতা সেন বেঁচে থাকবে মানুষের হৃদয়ে হাজার  হাজার বছর রূপসী বাংলা কবিতা গ্রন্থ  জীবনানন্দ দাশের এক অনবদ্য সৃষ্টি কবিতা তো অনেকেই লিখছেন, লিখবেন কিন্তু কবিতার মত কবিতা লিখা কি অত সহজ? তাই তো  জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন,

          সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি
জীবনানন্দ দাশের  গ্রন্থের মধ্যে বনলতা সেন, রূপসী বাংলা, ঝরা পালক,ধূসর পাণ্ডুলিপি,মহাপৃথিবী,বেলা অবেলা কালবেলা,সাতটি তারার তিমির বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

এই বনলতা সেন কবিতায় কবির রোমান্টিক-নিগূঢ় প্রেমের এক চমৎকার চিত্র ফুটে উঠেছে  অন্যান্ন বেশ কিছু নারীর নাম এসেছে তার কবিতায় যেমন বনলতা সেন,অমিতা সেন, সুরঞ্জনা, সুচেতনা, সরোজনী, শেফালিকা বোস,শ্যামলী  এবং সুজাতা
জীবিত অবস্থায়  তিনি অতটা  খ্যাতি অর্জন করতে পারেননি কারণ তিনি ছিলেন  প্রচারবিমুখ এক কবি তিনি জনপ্রিয় বিখ্যাত হয়ে উঠলেন মৃত্যুর পর পাঠক সমাজ কবির মৃত্যুর পর বুঝতে পারলেন আসলে তিনি কত বড় মাপের কবি ছিলেন

জীবনানন্দ দাশের কবিতা আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়কবিতাটি  আমার  হদয় কেড়েছিল যখন আমার বয়স মাত্র  দশ বছর।ক্লাস টু এর ছাত্র। (সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ জেলা।১৯৭৭ সাল) আমি  সাটুরিয়া শুকনো নদীতে সারি সারি ধানের গুচ্ছ আর কিছু পাখি দেখে মনের অজান্তে পড়তেছিলাম কবিতাটি(আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়”) আমি বিমোহিত হয়ে পড়েছিলাম পড়তে পড়তেদশ বছর বয়সে্র কিশোর আমি  তখন কি আর বুঝি?  কিন্তু কেন যেন কবিতাটি আমাকে মুগ্ধ করে ফেলেছিল সেই সময়ে আমি সেই কিশোর  বয়সে ভাবতেছিলাম যদি আমি মরে যাই তাহলে কি আজকের এই ধান ক্ষেতের বক,মাছরাঙ্গা,বালিয়া হাঁস  হয়ে ফিরে আসবো আবার পৃথিবীতে? আমার সেদিন কান্না পেয়েছিল। হয়তো কবিও তেমনটি ভেবে অমন অমর কবিতা লিখেছিলেন তার লেখার রূপ-রস-গন্ধ-সাহিত্য দিয়েকবিকে বেশ কিছুকাল মত্যু ভয় তারা করেছে বলে জানা যায়তাই  হয়তো এমন করুণ কবিতা তিনি লিখতে পেরেছেন
কবি জীবনানন্দ দাশ আরেক জায়গায় অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে কবিতায় লিখেছেন,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশী আজ চোখে দেখে তারা;
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া

আহ!! কি চমৎকার কবির খেয়াল, কি বাস্তব সত্য কথার জনক কবি
বাংলার প্রতিটি পাঠকের একবার করে হলেও জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়া উচিৎতার কবিতা আজ বংলা ছাড়াও ইংরেজী ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ হচ্ছেচিদানন্দ দাশগুপ্ত, বুদ্ধদেব বসু, থেকে শুরু করে  বিদেশী ক্লিনটন সিলি, জো উইন্টরের মত কবি সাহিত্যিকরা জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়ছেন,লিখছেন, অনুবাদ করছেন আজ কোথায়  উঠে গেছে জীবনানন্দের কবিতা কি বিশ্বয়!!!
কবি জীবনানন্দ দাশের মাতা কুসুমকুমারী দাশও একজন কবি ছিলেনবাল্যকাল থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেনআমরা অনেকেই জানি সেই বিখ্যাত
আদর্শ ছেলে" কবিতাটি

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
 কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে 
কবিতাটি কবি জীবনানন্দ দাশের মায়ের লেখা একটি কবিতা  কবি জীবনানন্দ দাশ  ১৯৫৪ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ অক্টোবর  কোলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম  দুর্ঘটনায় আহত হন। তার  ঊরুর হাড় ও পাঁজরে হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিলগুরুতরভাবে আহত অবস্থায় হাসপাতালে  ভর্তি্  হন এবং ১৯৫৪ সনের ২২শে অক্টোবর  রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ফজলুর রহমান
সৌদি আরব
১৭/১১/২০১৬


Fazlur Rahman
0534580722|0562998047|
Email:frahmanapple@yahoo.com|
Twitter:@Frahmantwittman|
www.fazlupedia.blogspot.com|Skype:frahman67