Sunday, October 30, 2016

আমার নাম নূরুনীগঙ্গা (My name is Nuruni Ganga. I’m a River.)

নূরুনীগঙ্গা আমার নাম।আমি একটি নদী।আমি গাজীখালি কালিগঙ্গা থেকে উঠে এসেছি।আমি মানিকগঞ্জ জেলাধীন, সিঙ্গাইর থানার- চারিগ্রাম হাইস্কুলের তীর ঘেসে জাইল্লা, পাড়িল, এবং গোলাইডাঙ্গা ও বলধারা ইউনিয়নের কিয়দংশ হয়ে মিতরা, পালড়া হয়ে মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীতে পৌঁঁছে গেছি।পিছনে বাম  দিকে ইচ্ছে করলে আমি টাকিমারা দিয়েও আবার কালিগঙ্গায় ফেরত যেতে পারি। এই আমার মোটামুটি পরিচয়। এখন আমার রূপ জৌলুস তেমন না থাকলেও এক সময় আমার ছিল ভরা যৌবণ।পানিতে ছিলাম পরিপূর্ণ, টইটুম্বুর।এখন আমার সুনাম ততটা নেই।কেউ আমাকে মনে করে না। আমাকে নিয়ে ভাবে না। সেজন্য আমি কিছুটা সঙ্কিত, লজ্জিত।যখন আমি অথৈ জলে সম্পদশালী ছিলাম তখন আমার স্রোতের ছিল প্রচন্ড দাপট।সব কিছু ভাসিয়ে নেয়ার ক্ষমতা আমার ছিল।আমার বুকে পাল তুলে কত নৌকা চলে যেত তার হিসেব নেই। সেই সময়ে এই চারিগ্রাম, দাশেরহাটি সহ আশপাশের সকল লোকজন লঞ্চ/স্টিমারে আমার বুকে ভেসে ভেসে তারা ঢাকা যেত। আমি ছাড়া সদর ঘাট যাওয়া কারও অন্য কোন উপায় ছিল না।আমিই তখন এক মাত্র ভরসা।আজ এরা সব ভুলে গেছে আমাকে। আমার মত অভাগিনী নূরুনীগঙ্গাকে তারা মনে রাখে না। সেলুকাস! সত্যি কি বিচিত্র এই দেশ।
বিচিত্র এসব লোকজন। আমি কি তাদের জন্য কিছুই করিনি। আমার দ্বারা কি তারা উপকৃত হয়নি? যখন বড় বড় লঞ্চ আমার বুক চিরে চলে যেত সদরঘাট তখন তোমরা কোথায় ছিলে? দেখনি আনন্দ লঞ্চ এর এত নাম ছিল তখন কার জন্য? আমার জন্য। আমিই আনন্দ লঞ্চ করে শত শত লোক ঢাকা শহরে যেতে সাহায্য করতাম। কোথায় ছিল আজকের এইসব বাস/কোস্টার/মিনিবাস/ মাইক্রো/ ট্যাক্সি? কিছুই ছিল না তখন। আমিই ছিলাম তখন এক মাত্র ভরসা। বিপদের সময় তো আমি ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু দুঃখ হয় আজ আমার বুকে পানি নেই। শুকিয়ে গেছে পুরোটা দেহ । আজ আমার বুক চৌচির। চৈত্রের দাবদাহে আমি ক্ষত-বিক্ষত। আমার উপর অজস্র কচুরিপানা জন্মেছে। যৎ সামান্য পানি থাকে সেটাও মানুষ শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে লোকজন আমার উপর সন্ধ্যায় হুমড়ি খেয়ে পরে।আমি বিস্মিত হই কিছুটা!! লজ্জা পাই খানিকটা!! আচল দিয়ে মুখ ঢাকতে ইচ্ছে করে। এদিকে আমার উপর দিয়ে পাকা চমৎকার কংক্রিট ব্রীজ হয়েছে ২/৩টি। হাজারো লোকজন চলাচল করে ব্রীজের উপর দিয়ে। ভাবতে ভালই লাগে। কিন্তু কিছু বেরসিক নির্দয়া মানব প্রাণী ব্রীজ থেকে বস্তা বস্তা  ডিমের খোসা ফেলতেও ছাড়ে না।
আমাকে নোংড়া করে। আমাকে দুর্গন্ধযুক্ত করে ফেলে। বলার নেই কেউ। সবাই যেন দেখেও না দেখার ভান করে। বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে। আমার মনের বেদনা কেউ বুঝে না।আমি নিরবে চোখের অশ্রু বিসর্জন দেই। আমার বুক চিরে ইরি, বোরো ধান চাষ হয়।মনে দুঃখ নেই।মনকে বুঝায়ে বলি যাক ধান চাষাবাদ তো জনগণের মঙ্গলের জন্য বৈকি। তবু আমি হতাশ হইনি। আশাও ছাড়িনি।একদিন হয়তবা আমি পুরনো জীবন-যৌবন ফিরে পাব। কোন সরকার হয়তো আমাকে ড্রেজার দিয়ে গভীর থেকে গভীর করবে। সেই আশায় বুক বাধি। ক্লান্ত-শ্রান্ত মনকে শান্তনা দেই, আশ্বস্ত করি যে, আবার আমি হয়তোবা হাসবো আনন্দের হাসি। সেই প্রতীক্ষায় আছি অধীর আগ্রহে। এইতো জৈষ্ঠ মাস আমার দেহে  জোয়ার আসতে শুরু করেছে। আমি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাব যৌবন জোয়ারে। জলে ভড়ে যাবে আমার দুই কোল। আমাকে দেখতে আসবে পথচারী। পাখীরা উড়ে যাবে আমার উপর দিয়ে। গাংচিল-মাছরাঙ্গা- আর বকেরা ফের মিলতে আসবে আমার সাথে। আমার দুই তীরে লোকজন দাড়িয়ে থাকবে।সেই আনন্দে আমি আত্মহারা। সত্যি আমি আজ মুগ্ধ। আমি বাঁধন হারা। পাগল পারা। আমি মুক্ত বিহঙ্গ। আমি উন্মাদ। আমি অতি শীঘ্রই হব ভড়া যৌবনা !!! আমি আজ তৃপ্ত। আমি আনন্দিত। তাইতো আমি হাসি আনন্দের হাসি হা হা হা হা হা হা ।


------ডাঃফজলুর রহমান, সৌদি আরব। ৩১/৫/২০১৬

Saturday, October 29, 2016

"বাংলার প্রতিচ্ছবি" ( Beautiful of Bangladeshi Six Season)


ষড়ঋতুর শ্রেষ্ঠতম দেশ বাংলা মায়ে এখন শরৎ এর শেষ সন্ধ্যা। আশ্বিনের বাকি কেবল দু’দিন। বিদায় শরৎ। সু-স্বাগত হেমন্ত। সাধারণতঃ কার্তিক-অগ্রহায়ণ দু’মাস (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর) হেমন্তকাল। হেমন্তের নবান্ন উৎসবের পরশ লাগবে গ্রামীণ জনপদে তথা বাংলার ঘরে ঘরে। হেমন্তের চাঁদনি রাত ভারি চমৎকার। আকাশে বারে বারে ছোটে যাওয়া তারা এক অপূর্ব দৃশ্য। যেন খসে পরা মুক্তো-মানিক। জ্যোৎস্নাসাত নিশিরাতে রাত জাগা চাঁদ মামা যেন বাংলার সৌন্দর্য প্রকৃতি দেখে খুশিতে আত্মহারা। সোনালি ধানের শীষে বাতাসের হিল্লোল সে কি ভুলা যায়? ভীষণ মজার সে খেলা। মিষ্টি গন্ধভড়া মাঠের ফসল কে না দেখতে চায়? হালকা শিশির মাখা ঘাস মুক্তো-দানার দ্যুতি।হেমন্তের পাগল করা রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ বড়ই বৈচিত্রময় বাংলার ঐতিহ্য। কি আমার দেশ!! হায় রে কি আমার বাংলা!! সেতো “আমার সোনার বাংলা”। বার বার ফিরে পেতে চায় মন বাংলার প্রতিচ্ছবি। আমাকে বার বার মুগ্ধ করে শ্রদ্ধেয় শিল্পী শাহ্‌নাজ রহ্‌মতুল্লার সেই গানের কলি---  "একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয় "............।  অথবা      “মন যদি চায় যেথা হারিয়ে, এস দু"জনাতে যাই এক সাথে, মাঠ-ঘাট-প্রান্তর ছাড়িয়ে, মন যদি চায়”……… ।গানটি আমার অত্যন্ত প্রিয়। শুনেছি গানটি শত-সহস্র রজনী জেগে। সত্যি তা ভুলার নয়।গাঁথা রয়েছে হদয়-নৈবেদ্যে। কুয়াশাছন্ন সকাল, আর পড়ন্ত বিকেলে গোধূলি বেলার অপরূপ নৈসর্গিক চিত্র সত্যি মন রাঙিয়ে তোলে।এই প্রবাসে আজ নিবিড় নিরবতায় কেবল সে’সবই ভাবছি আর স্মৃতিচারণ করছি । তাই কথার মালা কুঁড়িয়ে ভাষার তাজমহল গেঁথে দু’কলম লিখার একান্ত ইচ্ছে থাকা সত্যেও এই প্রবাস জীবনে সময় হয়ে উঠে না। তাইতো আবারও মনে পড়ে যায় সেই রূপসী বাংলার কবি  ----  জীবনানন্দ দাশের কবিতা-
 "আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শংখচিল শালিখের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।

ডাঃফজলুর রহমান
সৌদি আরব।
Email: frahmanapple@yahoo.com
Twitter: Fazlur Rahman@Frahmantwittman

Wednesday, October 26, 2016

“মুক্ত আলোচনা"


প্রকৃতির অপরূপ লীলা ভূমি বাংলাদেশ।কিন্তু আজ উজাড় হচ্ছে বনদেশে আজকাল বিলীন হচ্ছে চির সবুজের সমারোহনেই ততটা এভারগ্রীন বা চিরহরিৎ অভয়ারণ্যসবুজ-সজীব-সতেজ বন বনানী তেমন চোখে পরে নাপাখ-পাখালীর কল-কাকলী,কাকের কা কা ডাক, সেতো  স্বপ্নেও ভাবা যায় না এখনময়না,তোতা,শালিক,ডাহুক,ফিঙ্গে,ঘুঘু,মাছরাঙ্গা, শ্যামা,কোয়েল,কাকাতুয়া, ওদের তো দেখাই পাই নাবাংলার মুখ উজ্জ্বল করে জাতীয় পাখির খাতায় নাম লেখালো যে দোয়েল আজ সে কোথায়?  আমার কৈশোরে কাজই ছিল দোয়েল পাখির ডিম খুঁজ করাবাদামি-বেগুন-সবুজ আর কালো রঙের ছিটা দেখতাম দোয়েলের ডিমেমোটা গাছের খোড়লে বাসা তৈরী করে দোয়েলদোয়েলের বাসায় পেয়ে যেতাম এক জোড়া ডিমডুমুরের দুপাতার এক কক্ষ বিশিষ্ট ঘর বানায় টুনা আর বধূ টুনি এদের কাছ থেকেও পেতাম মাত্র দুটি  ডিম টুনি বড়ই কৃপন, নাকি সৃষ্টি কর্তার হুকুম জারি দুডিম পাড়ার জানি নাআর এসব ডিম যোগারে আমার সঙ্গী ছিল ফুফাতো বোন শেফালি বেগমনানা বাড়ীর নারিকেল গাছে দেখতাম শত শত আর্কিটেক্ট  বাবুইবাবুই পাখির কিচির মিচির শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যেতকি নিঁখুত নির্মাণশৈলী তার বাসার কি চমৎকার সেই বুননছোট ছোট বন্ধুরা বলতাম বাবুই পাখির বাসার বুনন খুলতে পারলে নাকি সোনা পাওয়া যাবে দুতিন দিন ধরে সোনার হরীণের প্রত্যাশায় খুলতাম সেই বাসা ধুর ছাই! সোনা পেলাম কৈ?বাবুই পাখি নিয়ে তাইতো কবি  রজনীকান্ত সেনলিখেছেন
বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই-
কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই;
……………………………
বাবুই হাসিয়া কহে- সন্দেহ কি তায়?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়
।।

আজ সে সব পাখি বিলীন প্রায়  চৈতালী ফসলের মাঠ জুড়ে থাকতো ধবল বকনদীর বাঁকে ছোট মাছ শিকারে ধূসর রঙের যে বক দেখতাম তাকে ডাকতাম কানি বকবড় বড় বৃক্ষের মগ ডালে এসে বসতো অতিথি পাখিকিছু ভদ্রবেশী বন্দুকধারী শিকার করতো সে সব অতিথি পাখিঅবশ্য সেজন্য মানুষের গালমন্দও খেতো দল বেঁধে আকাশে উড়তো কত সব পক্ষীকূল এক সময় গ্রাম বাংলার নদী-নালা- খাল-বিল,পুকুর-জলাশয়
ভড়া ছিল পক্ষীকূলেআজ সেসব কোথায়? দেখা পাইনা গাংচিলেরশকুন,চিল অদৃশ্য পেঁচারাও পালালো যেন কোথায়! বসন্তের কোকিলও কমে গেছেকোকিল ডাকা ভোরের আওয়াজ আর শোনতে পাইনা শুধু পাখি কেন কত কিছুই তো আজ বিলীন-বিলুপ্তিহারিয়ে যাচ্ছে কত কিছু সে ভাবনা কে ভাবে ইলিশে নেই স্বাদ-গন্ধ, মাশ কলাইয়ে নেই সু-ঘ্রাণসবজিতে নেই সজীবতা, নেই সুস্বাদআছে কেবল বিষ আর হাইব্রিডফল ফলাদি তে নেই এনার্জি, নেই মিষ্টি স্বাদআছে শুধু কেমিকেল, কার্বাইডআজকাল অনেকেই নিজ বাড়ীতে ফলবান বৃক্ষ লাগাতে পছন্দ করে না। লজ্জা পায়।লোকে নাকি ছোট ভাববে!! ছিঃ কি বিশ্রী কথা! নিজের বাড়ীতে বৃক্ষ রোপণ নাকি ছোট কাজ? বাড়ীর আঙিনায় থাকবে হাজারো ফুল-ফলের বৃক্ষরাজি

 নিজের গাছের ফল নিজে খাবো,
  বিষাক্ত ফল  কিনে না আনবো

 এই শ্লোগান সবার হওয়া উচিৎ