Saturday, June 3, 2017

Ramadan Iftar (রোজার ইফতার)

"রোজার ইফতার"
================
বাঙালিরা খাবারে সৌখিন জন্মাবধি। যুগে যুগে বাঙ্গালির প্রশংসা আছে ভোজন-বিলাসে। রোজায় ইফতারেও বেশ সৌখিন বাংলার জনগণ। ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার ইফতার মানেই চকবাজারের লোভনীয় খাবার। ঢাকার চকবাজারের জহুরের নামাজের পরই পরই শুরু হয়ে যায় বেচা-বিক্রী। চকবাজারের শাহি মসজিদকে ঘিরেই বসে ইফতারের সব দোকান। কোন রাস্তাই বাদ যায় না। শত শত দোকান সাজিয়ে বসে ইফতারীর পসরা। সর্ব সাকুল্যে কম করে হলেও পাঁচ শত এর অধিক ইফতারের দোকান বসে প্রতিদিন এখানে। কথিত আছে, প্রায় ১২৬ বছর আগে কালেম মিয়া নামের এক বাবুর্চি চকবাজারে প্রথম মুখ্রুচক এই খাবার তৈরি করেন। পরবর্তীতে বংশানুক্রমে তাঁর পুত্র আলম থেকে সালেকিন মিয়ার হাত হয়ে এখন এই খাবার সারা চকবাজার ইফতার মার্কেটে ছেয়ে গেছে। চক বাজারের ইফতারির বেশ সুনাম রয়েছে দেশ জুড়ে। ইফতারির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে রাজধানীর পুরানো ঢাকার চকবাজার।
এখানকার বাহারি ইফতারের মধ্যে রয়েছে "শিক কাবাব"।
মূল্য একটু বেশী হলেও ঐতিহ্যবাহী এই ইফতারি বাজারের জৌলুস কিছুটা কমতে থাকলেও নামডাকের কারণে অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে চকবাজারেই ইফতারি কিনতে বেশী স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।
এ ছাড়া আনার-আনারস-পেঁপে থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের তাজা ফল, পিঠা- পুলি-পায়েস, মিষ্টিসহ নানা সুস্বাদু খাবার সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।
সেই পরিচিত হাঁক-ডাক। ভিড়ের ভিতর থেকে বিক্রেতার কণ্ঠস্বর কানে ভেসে আসে বাহারি ইফতারির নাম- কাবাব, হালিম দইবড়া বোম্বে জিলাপি, খাসির হালিম, খাসির জালি কাবাব, রেশমি কাবাব,খাসির রোস্ট, বিফ চপ, চিকেন ফ্রাই, গ্রিল চিকেন, খাসির মগজের স্যান্ডউইচ, ফুল ডিমের চপ, বিফ কোপ্তা, ফুলুরি, টিক্কা কাবাব, সুতি কাবাব, জালি কাবাব, শাকপুলি, টিকা কাবাব, আস্ত মুরগির কাবাব, মোরগ মসল্লম, বঁটি কাবাব, কোফতা, চিকেন কাঠি, শামি কাবাব, শিকের ভারী কাবাব, ডিম চপ, কাচ্চি, তেহারি, মোরগ পোলাও, কবুতর ও কোয়েলের রোস্ট, খাসির রানের রোস্ট, দইবড়া, মোল্লার হালিম, নুরানি লাচ্ছি, পনির, বিভিন্ন ধরনের কাটলেট, পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং, ছানামাঠা, কিমা পরোটা, ছোলা, মুড়ি, ঘুগনি, বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, বোম্বাই রোস্ট,ফালুদা ও লাচ্ছি” আরো কত কি।
স্পেশাল রয়েছে ----- " বড় বাপের পোলায় খায় ”---
এছাড়া ----- ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, হালিমের পাশাপাশি রেস্তোরাঁয় রয়েছে লাচ্ছা পরোটা, পাঞ্জাবি চিকেন, চিকেন মাসাল্লা, চিকেন তাওয়া ড্রাই, প্রন টোস্ট, চিকেন বড়া কাবাব, বিফ রেনডাং, বিফ তাওয়া ড্রাই, সেই সাথে ফিরনি ও ঘিয়ে ভাজা জিলাপি।
স্বাগত বাঙালির ভোজন-বিলাস আর রসনা তৃপ্তি। সবাইকে ধন্যবাদ এবং পবিত্র রমজানের মোবারকবাদ।

 ফজলুর রহমান, সৌদি আরব। 
Email: frahmanapple@yahoo.com

Friday, May 26, 2017

Ramadan Mobarak -2017(মোবারক হো পবিত্র মাহে রমজান)

আজ ২৭/৫/২০১৭ রমজানের প্রথম দিন। সৌদি আরব সহ আরব বিশ্বের সকল দেশে আজ থেকে মাহে রমজান শুরু হয়েছে। আরবি শব্দ রামাদ্বান থেকে এসেছে রমজান বা রামাদান। রমজান ইসলামি পঞ্জিকা হিসেবে নবম মাস। এ মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমগণ ইসলামিক উপবাস সওম পালন করে থাকেন। রমজান মাসে রোজাপালন ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়তম। রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ত্রিশ দিনে হয়ে থাকে যা নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। বাংলাদেশ সহ ভারত উপমহাদেশের এটা দেশে “রোজা” নামে পরিচিত। রমজান মাসের ফজিলতের মাধ্যমে তামাম পৃথিবীর মুসলিম সম্প্রদায় মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে থাকেন। রজানের প্রথম দশদিন রহমতের, দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাত ও তিৃতীয় অংশ হল নাজাতের। রহমত, মাগফিরাত এবং মুক্তির পয়গাম নিয়ে আমাদের মুসলিম উম্মাহর সামনে হাজির হয় পবিত্র মাস মাহে রমজান। রমজান মানুষের পশুত্বকে খতম করে জাগ্রত করে মনুষ্যত্বকে।
রোজা ফরজ হয় এই রমজান মাসেই। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস এই রমজান। এই মাসে জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেওয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধু মাত্র রমজানের জন্য বাকী এগারো মাস জান্নাতকে সাজানো হয়ে থাকে। এই মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পথভ্রষ্ঠ শয়তানকে বেঁধে রাখেন, যাতে সে মুমিনদের কোন ক্ষতি করতে না পারে। এ মাসের একটি ফরজ আদায় অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান। আর একটি নফল অন্য মাসের একটি ফরজের সমান। এই মাসে যে কোন দান-সদকা, ভাল কাজের প্রতিফল আল্লাহপাক ৭০গুন করে দিয়ে থাকেন। যা অন্য মাসে মাত্র ১০গুন। জান্নাতের একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোযাদারকে ঐ দরজা দিয়েই ডাকা হবে। যে রোজাদারগণ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সে কখনও পিপাসিত হবে না।
রোজা বুকের ভেতরকার জটিলতা এবং পেরেশানিগুলো দূর করে দেয়। দেহ ও আত্মার ওপর শান্তির প্রভাব ফেলে, এটিও রোজার অন্যতম একটি ফজিলত।
আসলে রমজানের এ বাহ্যিক উপকারিতার কথা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বেশ কিছুকাল পূর্বেই প্রমাণ করেছে। আল্লাহ পাক আমাদের জন্য এ বিধানটি দিয়েছেন ফলে এতে অবশ্যই কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
আর একটি বিষয় হচ্ছে রমজান এলেই শুধু কোরআনের মাহাত্ম্য বা মর্যাদা বেড়ে যায়। বাকি মাসগুলো গুরুত্ব দেই না। রমজানে আমরা নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করে থাকি, রমজান বিদায় নিলে আবার খারাপ কাজে ঢুকে পড়ি যা মোটেও সঠিক নয়।
পরিশেষে সবাই আমরা রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে চলি এবং একমাস রোজা পালন করি সেই সাথে রমজানের পরেও আমরা সবাই যেন ইবাদত-বন্দিগির করি সেদিকেও আমাদের মনোযোগ দেয়া জরুরী। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুক। আমিন।

(Sahorail Mela-2017) "জমে উঠেছে সাহরাইল সিদ্ধাবাড়ী মেলা-২০১৭"

মেলা সামাজিক আনন্দ-বিনোদন ও ধর্মীয় উৎসবের কারণে একটি স্থানে অনেক মানুষ একত্রিত হয় । মেলা বিভিন্ন রকমের হতে পারে । মেলার সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্টীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির যোগাযোগ থাকে । বাংলার এই সংস্কৃতিতে থাকে সব ধর্মের মানুষের সংস্কৃতির সমন্বয় । মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনে আসে প্রানচাঞ্চল্য। আশে পাশের ২০/৩০ গ্রামের লোকজন মেলায় সমাগম ঘটে।

মানিক্গঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায়  সাহরাইল সিদ্ধাবাড়ী মেলা-২০১৭ একটি পুরাতন মেলা। এটি শায়েস্তা ইউনিয়নের সাহরাইল বাজারে পাশে মিলে থাকে। স্থানীয় সিদ্ধার্থীরা মেলার আয়োজন করে থাকে। এ মেলাটি ৩০০ থেকে ৪০০ বছর যাবৎ উদযাপিত হয়ে আসছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। জ্যৈষ্ঠ মাসে মেলাটি শুরু হয় এবং পনের দিন থেকে এক মাস ব্যাপী মেলাটি চলে। এই মেলায় প্রধান আকর্ষণ সার্কাস, পুতুল নাচ, এবং নাগরদোলা। যাত্রা গানেরও আয়োজন করা হয়।
এছাড়া বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী মেলায় বেচা-বিক্রী হয়। রাঁধুনীর মসলার কাঁচামাল ধনিয়া,শুয়াজ, জৈন, তরিতরকারী কাটাকাটির দা-বটি,বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রী, বেতের তৈরী ধামা-কাঠা এখানে পাওয়া যায়। বেদে বহরের চমৎকার আয়োজন মেলাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। মহিলাদের ভীড়ে লাল,নীল শাড়ির ছোঁয়ায় বেদে বহরের অলি গলি রঙিন হয়ে উঠে। মিষ্টির দোকান গুলোও থাকে লোকজনে ভরপূর। রসগোল্লা, চমচম, কালো জাম, মোহনভোগ সহ বাহারি জিলেপীও মিষ্টির দোকানের গলি থাকে পরিপূর্ণ। সেই সাথে মৌমাছিদের সরব আনাগোনা আর ভন ভন শব্দ তরঙ্গ মেলাকে ভিন্ন এক মাত্রার যোগান দেয়। গ্রামীণ মৃৎশিল্প ও কারুপণ্যের বিক্রীও মেলার আরেক আকর্ষণ। সবচেয়ে মজার দৃশ্য সাধু-সন্যাসিদের এরিয়া। বিভিন্ন
বয়ষ্ক সাধুদের সাথে ক্ষুদে সাধুদের সমাগম হয় সাহরাইল মেলায়।
সব মিলে সাহরাইল মেলা-২০১৭ এবার বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। সবাই আনন্দঘন মূর্হুতে কাটাবে, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মেলায় যাবে,রাস্তায় থাকবে বাইসাইকেল,মোটর সাইকেল, রিকশা-অটোর দৌড়াদৌড়ি। এমন দৃশ্য সত্যি মনকে দোলা দেয়। এই প্রবাস জীবনে একবার হলেও এক পলক তাকাতে ইচ্ছে জাগে গ্রামীণ মেলার দিকে। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করছি। ধন্যবাদ।

Thursday, May 25, 2017

Fazlur Rahman's Poem (ফজলুর রহমান কবিতা)

"রূপসী কণ্যা"
---ফজলুর রহমা
রূপসী উড়ায়ে লাল বেনারসি শাড়ির আঁচল,
কাশবনের কণ্যা এলোমেলো কেশ উড়ে চঞ্চল।
হাসিতে তার মুক্তা ঝরে মায়াবী সেই চেহারা,
লাল ঠোঁটে ঝিলিক ছড়ায় মসৃণ আমলকী বহেরা।
তেমনি দেখেছি তারে প্রিয়ার সেই কালো চোখ,
যেমনি দেখেছে জীবনানন্দ মায়াভরা বাংলার মুখ।
আমি বার বার ফিরিতে চাই আমার প্রেমের বঙ্গদেশে,
যেখানে মিষ্টি গান গায় কোকিল ধান শালিকের বেশে।
পাগল করা ফুলের হাওয়া যে দেশে অবিরাম বয়ে যায়,
মনের মানসী লাউয়ের শাক নিয়ে বসে সুধায় আমায়।
আমি তার জন্য প্রহর গুণে যাই বছর-মাস-দিন,
সে হবে মোর মনের আয়নার একজন শারমিন।
সৌদি আরব-২৪/৫/২০১৭


"বসন্ত দিনে"
------ ফজলুর রহমান
কত ফুলের মিলন মেলা আজি বসন্ত দিনে,
প্রেমের অমৃত সুধা মিলবে কেমনে তুমি বিনে।
আমি জেগে রই রাত্রির ঘোর অন্ধকারে চেয়ে থাকি,
করবীর মালা নিয়ে তোমার আসতে আর কত বাকী।
বসন্তের দমকা হাওয়ায় পুস্প-পাপড়ি খসে পড়ে যায়,
প্রিয়তমার গাঁথা ফুলের মালা আমায় কখন যে পড়ায়?
আমি চিন্তিত আমি ক্লান্ত প্রেমের পথিক হৃদয়ে ভয়,
মালিনীর মালা রহিবে মোর গলে তাইতো মনে হয়।
আমার প্রতীক্ষা আমার অপেক্ষা এ শুধু তোমার জন্য,
এ জীবনে তোমাকে হাড়ালে প্রেমিকের বুক হবে শূণ্য।
হাড়াতে চাই না তোমায় চলে এস কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায়,
বসন্তের পুষ্প মঞ্জুরী মেখে তাকাবো শ্যামল মায়ায়।
তুমি কোথায় শিমুল পলাশের গুচ্ছ নিয়ে আছ বসে,
আমার হাতে বকুলের মালা তাতে চাঁপা ফুল যায় খসে।
সৌদি আরব-২৩/৫/২০১৭

"শ্রাবণের ভালবাসা"
----- ফজলুর রহমান
শ্রাবণের ঝিরিঝিরি হাওয়া আর হাসনাহেনার সুভাষ,
বিষাদে জ্বলে যাওয়া প্রেমিক সেও পায় বাঁচার আচ্ছাস।
পলে পলে ফিরে ফিরে সুগন্ধী গন্ধরাজের মিষ্টি গন্ধ,
পাগল করে হদয় আমার মনটা হয়ে যায় স্নিগ্ধ।
রক্তজবা আর মল্লিকার রক্তিম আভায় রঙিন তুমি,
যদি না পেতাম তোমার পরশ অন্তর হত মুরুভূমি।
তুমি আছ বলে তারারা খেলা করে নীল আসমানে,
ফুলেরা ফুটে বলে এত সৌন্দর্য থাকে ওই বাগানে।
আলো আর আলেয়া হয়ে এলে তুমি আমার জীবনে,
জলন্ত প্রেমের প্রদীপ নিভিতে দেব না সেই মরণে।
ভালবাসা অমর অবিনশ্বর হয় এই ধরাধামে,
মানব কুলে জন্ম আমার প্রেম রবে জনমে জনমে।
ভুলিতে চাই না আমি সুন্দর তোমার ভালবাসা,
ক্ষণে ক্ষণে মনে মনে থাকিবে শুধুই প্রত্যাশা।
সৌদি আরব-২১/৫/২০১৭

"ভালবাসার গল্প"
---- ফজলুর রহমান
কুয়াসাছন্ন সকালে মেহেদি রাঙানো পায়ের ঝলকানি,
প্রিয়তমা শারমিনকে যেভাবে দেখেছিলাম সেই কাহিনী।
নুপুর ছিল সাদা পায়ে ঝুমুর ঝুমুর চমৎকার শব্দ,
হৃদয় আমার পুলকিত হয়ে উঠে মুগ্ধ আমার চিত্ত।
সুধালাম তাকে মনের আবেগ ঢেলে বলিলাম কথা,
জানিয়ে দিলাম শত জনমের আমার মনের ব্যথা।
শারমিন শান্ত এবার, কহে মোরে ভালবাসতে পার?
যদি ব্যর্থ হও নিটোল ভালবাসায় এই দুনিয়া ছাড়।
কহিলাম তাকে আত্মার ভাষা যা ছিল আমার মনে,
অনেক স্বপ্ন তোমাকে নিয়ে জানালাম কানে কানে।
স্বপ্ন হল সত্যি দুজনার সুখের মিলনের যাত্রা শুরু,
নিয়তি জানে কি হবে পর জনমে কলিজা দুরু দুরু।
শারমিন ভাসে স্বপ্ন ভেলায় তাকিয়ে মিলন মেলায়,
কত দিন আর ভাগ্যের হায়াত প্রেম ঢাল এ বেলায়।
সৌদি আরব-২১/৫/২০১৭

Baking Mango (আম কুড়ানো)

ঝড়ের দিনে মামার বাড়ী
আম কুড়াতে সুখ,
পাকা জামের মধুর রসে
রঙিন করি মুখ
      ---- জসীম উদ্দিনের
পল্লিকবি জসীম উদ্দিন চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলেছেন আম কুড়ানোর গল্প তার লেখার মাঝে। প্রাইমারী স্কুলে কে না পড়ছে এ কবিতাটি। আম কুড়ানো শৈশবের এক মজার স্মৃতি। সবার জীবনেই এ ঘটনা ঘটেছে কম বেশী। ছেলে বেলার স্মৃতি গুলি  বড়ই মনোরম মনে হয়। অনেক কথাই আজ  ভুলে বসেছি। তারপরও কিছু কথা বলার সাধ জাগে, স্মৃতিচারণ করতে ভাল লাগে। কারণ ছোট বেলা সবারই ভীষণ এক দুরন্ত সময়। সব কিছুই তখন নতুন নতুন ভাব। সব কিছু খেতে ভাল লাগে। মুখে রুচি থাকে যথেষ্ট ভাল আর খারাপ যাই হোক সবই খেতে ভাল লাগে। সেই সময় কে শুনে বাপ-মায়ের কথা। আম কুড়াতে চলে গেছি কত জায়গায় জঙ্গলের গভীরে গিয়েও আম কুড়িয়েছি আমার নানা বাড়ীর পাশে তারা ভাইয়ের আমগাছ ছিল অনেক বড় বড় ফজলি আমের গাছ ছিল বেশ কয়েকটি ঝরের দিনে সেই বাড়ীতে যেতাম আম কুড়াতেবেতের ঝুর ছিল বিরাট তার নিচে চলে যেতাম আম কুড়াতেআমার নানীর একটি কাঠের আলমারী ছিল আম কুড়িয়ে সেই আল্মারীতে  ভরে ফেলতামআরও কত বাড়ীতে যেতাম আমার জন্য ছোট বেলার এ কাহিনী গুলি মনে হলে খুব ভাল লাগে। কাঁচা আম চাকু দিয়ে কেটে লবন-লঙ্কা মেখে  একসাথে বন্ধুদের নিয়ে খাওয়া সেকি আর ভুলবার বিষয়? নিজের বাড়ীর না হোক মহল্লায় তো আর আম গাছের কমতি নেই। সবার বাড়ীতে দুএকটি আম গাছ থাকা তো মামুলি ব্যাপার। ব্যাস... মার ঢিল, নয়তো গাছ বেয়ে বেয়ে মগ ডালে গিয়ে পেরে নিয়ে আসতাম আম। এদিকে বাড়ীওয়ালার সাথে বিড়ি-সিগারেট দিয়ে ভাব জমাতাম সেই ফাঁকে আম চুরি চলতে থাকতো। এসব আজ কল্প কাহিনী মনে হলেও  এক সময়ে ছিল রিয়ালিটি। খুবই মজাদার কাহিনী।  ছাত্র জীবনে বন্ধুদের নিয়ে কত কিছুইতো করেছি। শুধু আম কেন ডাব কি কম পান হয়েছে? নারিকেল বৃক্ষে রশি বেঁধে নামিয়ে দেয়া হত একেবারে নিচে। আর ডাবেরা এসে যেত হাতের মুঠে। হা হা হা। ডাব চুরির সেই সব দিন আজ কোথায়!!! সবার শৈশবেই একটু আধটু এসব হয়ে থাকে। ডোন্ট বি  মোর অনেস্টআমরা কেউ ফেরেশতা নই।


সবশেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের মত বিদায়।


Sunday, May 14, 2017

বাদল দিনের খিচুড়ি --------ফজলুর রহমানের কবিতা-৩

"বাদল দিনের খিচুড়ি"
--------ফজলুর রহমান।

বাদল ঝরা বৃষ্টির রজণীর স্বাদ নিতে
খিচুড়ি-গোশত-চাটনির মজা পেতে
কেউ ব্যাকুল সরিষার তেলে পেয়াজ ডলে,
বুড়ো দাদু শক্ত হাতে আপন পাতে লঙ্কা ডলে।
আমচুর-জলপাই খাই আর না পাই,
আজকের বর্ষায় দাদীদের জামানায় ফিরে যাই।
বিরিয়ানি-বোরহানি-জাফরানি আজকে নাহি চাই।
খানদানী পোলাও সবাইকে ভুলাও চাহিবে না ঘি,
মেঘের দিনে টমেটো-সালাদের মজা দেবে কি ঘি?
চাসনে তোরা কোপ্তা-কোরমা খেয়ে নে আজ খিচুড়ি,
বাদল বেলায় চাদর কাঁধে হাটে যায় কোন বেপারী?


 সৌদি আরব-১৪/৫/২০১৭

"আজি হতে ৩২ বছর আগে" - ফজলুর রহমানের কবিতা-২ Fazlur Rahman's Poem

আজি হতে ৩২ বছর আগে

       ------ফজলুর রহমান

আজি হতে ৩২ বছর আগে,
কে কোথায় ছিলে বন্ধুরা জেগে।
১৯৮৫ সালের ব্যাস ভাবো কি মনে
এতটা বছর পেরিয়ে রবে কি স্মরণে?
চারিগ্রাম হাইস্কুলের সবুজ সেই মাঠে,
যে স্মৃতি তাড়া করে নুরুনী গঙ্গার ঘাটে।
বিদ্যালয়ের পিছনেই তো ওই নদী,
সাথীরা মিলে দিন রাত করেছি কত ফন্দী।
কত হাসি কত গান বেজেছে আবার কি সম্ভব,
আজও কি এতটা পথ পেরিয়ে ভুলেছি সে সব?


সৌদি আরব-১০/৫/২০১৭

সে আমার জন্মভূমি- He is my Homeland - (ফজলুর রহমানের কবিতা) Fazlur Rahman's Poem-2

সে আমার জন্মভূমি
------------ফজলুর রহমান

জোৎস্না বিলায় চাঁদ আকাশে একা বসে,
ফুলেরা জেগে জেগে মুক্তোর মত হাসে।
রূপালী চাঁদ ফিরে ফিরে তাকায় জমিনে,
তারারা মুসকি হেসে থাকে নীল আসমানে।
এ যেন ওদের মনের চমৎকার মিতালী,
গালিচার জুঁই-চামেলী ডাকে কই গো শেফালী।
রক্ত রাঙ্গা কৃষ্ণচূড়া আবির ছড়ায় বাতাসে,
গ্রীষ্মের দুপুরে দমকা হাওয়া বহে দীর্ঘশ্বাসে।
জারুল আর জামরুলের গন্ধ মাখা প্রকৃতি নাচে,
কাঁঠালের সুভাসে মধু সঞ্চয়ে মৌমাছিরা নাচে।
বাংলার ষড়ঋতু উঁকি মারে দুই মাসে মাসে,
চির সবুজের সমারোহ বয়ে যায় ঘাসে ঘাসে।
এ কেমন মায়া ভড়া হৃদয় কারা বাংলা আমার,
মরার আগে ফিরি যেন নিজ জন্মভূমিতে আবার।

সৌদি আরব-১৩/৫/২০১৭

Saturday, May 6, 2017

Shamsuzzaman Khan, DG, Bangla Academy. শামসুজ্জামান খান(মাখন মিয়া) মহা পরিচালক,বাংলা একাডেমী


জনাব শামসুজ্জামান খান ১৯৪০ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায় চারিগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে চারিগ্রাম এস এ খান হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৫৯ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান বাংলা ও ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর বাংলা ডিগ্রি লাভ করেন । তিনি হরগঙ্গা কলেজ, মুন্সিগঞ্জ ১৯৬৪ সালে অধ্যাপনা করেন, ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৮-১৯৭৩ সালে দুই দফা তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনা করেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি খন্ডকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সালে ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক। বর্তমানে তিনি বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

[ তিনি তুর্কু বিশ্ববিদ্যালয়, ফিনল্যান্ড থেকে ফোকলোর প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেট লাভ করেন।]
লোক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে নামটি অনস্বীকার্যভাবে চলে আসে তিনি হলেন জনাব শামসুজ্জামান খান। তিনি তাঁর লেখায় নানাভাবে অবদান রেখেছেন। তিনি সকল প্রতিষ্ঠানে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। কাজের পরিবেশকে বেগবান করেছেন। কর্মের সাধনা ও মনন চর্চা তিনি অনেক দক্ষতার সাথে করে যাচ্ছেন। তিনি বহুমাত্রিকভাবে লেখক। তিনি একজন আলোকিত মানুষ এবং প্রচারবিমুখ মানুষ। পেশাগত জীবনে তিনি সরকারের অধীনে বিভিন্ন বিভাগে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। কিন্তু কোনো সরকারই তার চিন্তার বাইরে কাজ করাতে বাধ্য করতে পারেনি। তিনি নিজের গতিতে চলেছেন সর্বদা।
জনাব খান জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সত্যনিষ্ঠ থেকে নির্ভয়ে কাজ করে চলেছেন। কোন বাধা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
তিনি লোক সাহিত্য থেকে শিশু সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আশিটি বই লিখেছিলেন।
জনাব খান ১৯৬৭ সালের ১০ ডিসেম্বর চারিগ্রাম খান পাড়ার মরহুম জনাব ফরহাদ খানের কণ্যা "হেলেনা বেগমের" সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
২০০১ সালে তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৯ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
২০১৭ সালে তিনি গবেষণা ও প্রশিক্ষণে স্বাধীনতা পুরষ্কারে ভুষিত হয়েছেন।

ফজলুর রহমান, সৌদি আরব।
Cell Phone:00966534580722
Email: frahmanapple@yahoo.com
E: rahmanmedical.hall89@yahoo.com
Twitter:@Frahmantwittman

Monday, May 1, 2017

Poet Khan Mohammad Moinuddin (কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন)

"ঐ দেখা যায় তাল গাছ
ঐ আমাদের গাঁ,
ঐ খানেতে বাস করে
কানা বগীর ছা"............
---খান মুহম্মদ মঈনুদ্দিন
কবিতাটি লিখেছেন কবি খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন। তিনি একজন কবি, সাহিত্যিক, লেখক। তিনি ১৯০১ সালের ৩০শে অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার চারিগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। (চারিগ্রাম অগ্রণী ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংক বিল্ডিং ঘেঁষে পূর্ব পাশের(কালু মিয়ার চা এর দোকান) প্লটই কবি খান মুহাম্মদ মইনুদ্দিনের বাড়ী। এখন সম্ভবত বাড়ীটি বিক্রী হয়ে গেছে।
তার বাবার নাম মুহম্মদ মমরেজ উদ্দীন খান ও মায়ের নাম রাকিবুন নেসা খানম। পিতা-মাতার চার ছেলে দু'মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম সন্তান। মা-বাবা আদর করে ডাকতেন "হিরু মিয়া" ।
মঈনুদ্দীনের বাবা মমরেজ উদ্দীন নিজ গ্রামের একটি পাঠশালায় শিক্ষকতা করতেন। বাবার কাছে এই পাঠশালায় মঈনুদ্দীনের লেখাপড়ার হাতে খড়ি। মঈনুদ্দীন পড়াশোনায় ছিলেন খুবই মনোযোগী।
শৈশবের পর পরই কবি পিতা মাতাকে হারান। তখন কবির বয়স মাত্র বার বছর। কবির পূর্বপুরুষরা তেমন কোন ল্যান্ড প্রপার্টি অথবা অন্য কোনো সহায় সম্পদ রেখে যাননি। যার ফলে অল্প বয়সেই কবিকে জীবিকার সন্ধান করতে হয় এবং তিনি চলে যান কলকাতা। সেখানে গিয়ে পুস্তক-বাঁধাই কর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ছোটবেলায় বই পড়ার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল কবি মঈনুদ্দীনের। নতুন বইয়ের গন্ধে আর ছড়ার ছন্দের ঝংকারে উৎফুল্ল হয়ে ওঠতেন। একবার কলকাতায় এসে তিনি নিজ হাতে বই বাঁধই করে সারি সারি ভাবে সাজিয়ে রাখেন সারা ঘর ভরে। আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে বই খুলে চোখ বুলান, গন্ধ শুকেন। নতুন বইয়ের গন্ধে মন আনন্দে ভরে ওঠে।
মঈনুদ্দীন একাকী মনে ভাবতে লাগলেন কবি হতে হলে ভাল লেখাপড়ার প্রয়োজন। সেই চিন্তা মনে পোষণ করে ভর্তি হলেন নৈশ বিদ্যালয়ে। দিনে কারখানার কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন আর রাতের বেলায় বই হাতে স্কুলে পড়তে যান। এই সময় বালক কবি মঈনুদ্দীনের সঙ্গে পরিচয় হয় একই মহল্লার ছাত্র খন্দকার আবদুল মজিদ নামে এক ছেলের সঙ্গে। আবদুল মজিদ তিনিও ছিলেন একজন সাহিত্য সেবক। সাহিত্য নিয়ে আলাপ আলোচনায় একসময় দু'জন ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। দু'বন্ধু মিলে রাত জেগে হাতে লিখে প্রকাশ করেন 'মুসাফির' নামে একটি দেয়াল পত্রিকা। এই দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের পর মঈনুদ্দীন আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তারপর তিনি তার লেখা পাঠাতে লাগলেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। ১৯২১ সালে তার লেখা "খোদার দান" নামে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয় মাসিক "সহচর" পত্রিকায়। পত্রিকার পাতায় ছাপাক্ষরে নিজের নাম দেখে কিশোর কবি আনন্দে হয়ে পড়েন আত্মহারা।
মঈনুদ্দীন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখতে থাকেন এবং কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে দেখা করে পরিচিত হতে থাকেন। এমন করে একবার দৈনিক "নবযুগ" পত্রিকা অফিসে গিয়ে বিদ্রোহী কবি নজরুলের সঙ্গে দেখা করে কথাবার্তা বলে খুব খুশী হন মঈনুদ্দীন। নজরুলের কাছে অনুপ্রেরণা পেলেন। প্রথম দেখেই নজরুলের কথা-বার্তা, চলন-বলন, পোশাক-আশাক সবকিছুই ভাল লাগে মঈনুদ্দীনের। কবি নজরুলকে ভালবেসে অনুকরণ করতে লাগলেন মঈনুদ্দীন। শুধু নজরুলের ব্যবহারিক বিষয়বস্তু অনুকরণ করেননি, মঈনুদ্দীন তার লেখালেখির বিষয়-আশয়ও নজরুলকে অনুসরণ করে লিখতে শুরু করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে কলকাতা কর্পোরেশন শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি কলকাতা কর্পোরেশন ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। বিশ বছর সেখানে কাজ করেন। শিক্ষকতাকালীন তিনি শিশুদের জন্য কিছু লেখালেখির প্রয়োজন মনে করেন।
তিনি ১৯২৩ সালে কবি মঈনুদ্দীন সাপ্তাহিক মুসলিম জগত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন।
৫০ ও ৬০-এর দশকে শিশুতোষ সাহিত্য রচনা করে প্রচুর সুনাম অর্জন করেন। কবির লেখা "কাঁনা বগির ছা" কবিতাটি বাংলাদেশের শিশুদের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং "যুগশ্রেষ্ঠ নজরুল" নামক জীবনীটির জন্য তিনি বহুলভাবে সমাদৃত। পত্রিকায় "বিদ্রোহ" শীর্ষক একটি সম্পাদকীয় প্রকাশের দায়ে তাঁকে ছয় মাস কারাভোগ করতে হয়। হুগলি জেলখানায় থাকাকালীন তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর মুহম্মদ মঈনুদ্দীন ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকায় "আলহামরা লাইব্রেরি" নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশ করতেন।
কবি মঈনুদ্দীনের রচিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মুসলিম বীরাঙ্গনা (১৯৩৬), আমাদের নবী (১৯৪১), ডা. শফিকের মোটর বোট (১৯৪৯), খোলাফা-ই-রাশেদীন (১৯৫১), আরব্য রজনী (১৯৫৭), বাবা আদম (১৯৫৮), স্বপন দেখি (১৯৫৯), লাল মোরগ (১৯৬১), শাপলা ফুল (১৯৬২)। তিনি অনেক কবিতা, গল্প ও উপন্যাস লিখেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কবিতা- পালের নাও (১৯৫৬), হে মানুষ (১৯৫৮), আর্তনাদ (১৯৫৮); উপন্যাস- অনাথিনী (সহচর পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত, ১৯২৬), নয়া সড়ক (১৯৬৭); ছোটগল্প- ঝুমকোলতা (১৯৫৬)। তিনি যুগস্রষ্টা নজরুল (১৯৫৭) শিরোনামে একটি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন।
১৯৬০ সালে "যুগশ্রেষ্ঠ নজরুল" বইটির জন্য তিনি ইউনেস্কো পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৬০ সালে কবি শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তিনি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেন।
১৯৮১ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি কবি মঈনুদ্দীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 ফজলুর রহমান, সৌদি আরব।
Cell Phone:00966534580722
Email: frahmanapple@yahoo.com
E: rahmanmedical.hall89@yahoo.com
Twitter:@Frahmantwittman

May Day-2017 আজ মহান মে ডে" - আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস

আজ পহেলা মে। মহান মে ডে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এ দিবস মে মাসের ১ তারিখে পালন করা হয়ে থাকে। এ দিনটি সারা বিশ্বেই পালিত হয়। দিনটি সরকারীভাবে ছুটির দিন। অনেক অনেক দেশে মে দিবসকে লেবার দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। আগের দিনে শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রম করতে হত, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হত কিন্তু মজুরি পেত কম। সেজন্য শ্রমিকরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করতো। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন, এবং তাদের দাবী কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেয় ১৮৮৬ সালের ১লা মে।
কিন্তু কারখানার মালিকগণ দাবী মেনে নেননি। শ্রমিকরা যে মানুষ নামের কোন প্রাণী তা মালিকরা ভাবতো না তারা পশু মনে করতো শ্রমিকদের। তারপর ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে আমেরিকার শিকাগোর শহরে “হে” মার্কেট নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হয় এবং অনেক বাক বিতন্ডা হওয়ার পর আন্দোলন রত সেই শ্রমিকদের ওপর পুলিশের গুলি চালানো হলে ১১ জন শ্রমিক মারা যায়।
শেষ পর্যন্ত অনেক ইতিহাস, অনেক কাহিনী,অনেক দরবার করার পর শ্রমিকদের "দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার" দাবী অফিসিয়াল মেনে নেয়া হয় এবং স্বীকৃতি পায়। আর পহেলা মে বা মে দিবস প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবী আদায়ের দিন হিসেবে। বিশ্বব্যাপী আজও তা পালিত হয়।
সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৮০টি দেশে ১লা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারি ভাবে পালিত হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় এইদিন পালিত হয় না। এ ছাড়া এইদিনে আরও কিছু ঘটনা রয়েছে যা আঞ্চলিক ভাবে হয়তো পালিত হয়।
আমেরিকা ও কানাডাতে অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এই দিন পালনের উদ্যোগতা। হে মার্কেটের হত্যাকান্ডের পর আমেরিকার তৎকালিন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড যিনি আমারিকার ২২তম ও ২৪ তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি মনে করেছিলেন ১লা মে তারিখে যে কোন আয়োজন হানাহানিতে পর্যবসিত হতে পারে। সে জন্য ১৮৮৭ সালেই তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেন এব্বং সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালন করেন মে মাসে নয়।
বাংলাদেশেও পালিত হয় ‘মহান মে দিবস’। কিন্তু আমাদের দেশের দিনমজুর/ শ্রমিকগণ সঠিক মূল্য পায় না। যাদের মাথার ঘাম/রক্ত বেয়ে মাটিতে পরে তার পরও তাদের শ্রমের মূল্য হয় মূল্যহীন। সবাই শুধু ভাষণ-বক্তব্য দিয়ে মুখে ফেনা তুলে। কিন্তু শ্রমিকের ভাগ্য বদল হয় না। শোষণ চলে ঠিকই। আজ শ্রমিকরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের মূল ব্যাকবোন এসব শ্রমিক। প্রবাসে আমাদের প্রচুর সংখ্যক শ্রমিক ভাই-বোনরা বঞ্চনার শিকার হন। কিন্তু বাংলাদেশ এম্বাসী কতটুকু সেটার সমাধান দিতে পারে? কিছুই না। অথচ ইন্ডিয়া,পাকিস্তান,ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম সহ শত শত দেশের এম্বাসি কত শক্ত একশন নেয় তাদের জনগণের নানা সমস্যার জন্য। বাংলাদেশ সেখানে মিচি বিড়ালের মত গোজামিল দিয়ে বসে থাকে। আর শ্রমিকরা নিরবে চোখের পানি ফেলে জেলে যায় নয়তো দেশে ফেরত চলে যায়। সরকার কতটুকু তার সমাধান করে?????
প্রবাসী শ্রমিকরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আমরা প্রবাসে কঠুর পরিশ্রম করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করছি। বাংলাদেশের সরকার আমাদের টাকায় চলে। আমাদের রোজগার করা টাকায় তাদের বেতন চলে, তাদের সংসার চলে,তাদের বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ হয় রাজধানী ঢাকায়, তারা বউ নিয়ে বিলাসবহুল রাজপ্রাসাদে আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ীতে ঘুরে, নৌবিহারে যায়, হানিমুনে যায়। কোথা হতে আসে এত টাকা???? এসব টাকা আসে দেশী-বিদেশী বাংলাদেশী শ্রমিকের রক্ত বিসর্জনের মাধ্যমে। কাজেই তাদের দিকে একবার সুদৃষ্টি দিন। এদের কথা আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে।
নচেৎ জাতি হিসেবে আমরা পিছনেই থেকে যাবো। সকল প্রবাসী ভাই সহ দেশবাসী সবাইকে ধন্যবাদ।

ফজলুর রহমান, সৌদি আরব।
Cell Phone:00966534580722
Email: frahmanapple@yahoo.com
E: rahmanmedical.hall89@yahoo.com
Twitter:@Frahmantwittman

Thursday, April 27, 2017

Shamsul Islam Khan Naya Miah,Ex.Industries Minister, Parliament of Bangladesh শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়া, সাবেক শিল্পমন্ত্রী, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।

জনাব শামসুল ইসলাম খান(নয়া মিয়া) একজন বিচক্ষণ-নিষ্ঠবান- দক্ষ-দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সফল রাজনীতিবিদ তিনি ছিলেন দেশ বরেণ্য শিল্পপতি এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ীও বটে শামসুল ইসলাম খান(নয়া মিয়া) ১৯৩০ সালের ১লা জানুয়ারী জন্ম গ্রহণ করেন তিনি ১৯৯১ সালে ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ষষ্ঠ এবং সপ্তম জুন ১২, এবং ২০০১ সালের আক্টোবর ১, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট চারবার নির্বাচিত সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি  মানিকগঞ্জ-৪ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। জনাব শামসুল ইসলাম খান ২০-০৩-৯১ থেকে ১২-০৯-৯৩  পযর্ন্ত আড়াই বছর মাননীয় মন্ত্রী ছিলেন(শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ) মানিকগঞ্জ জেলায় উন্নয়নে যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শামসুল ইসলাম খানমানিকগঞ্জ এবং সিঙ্গাইর উপজেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় তিনি বৈপ্লবি পরিবর্তন এনেছেন। অন্য কেউ পারতেন কিনা জানিনা।তবে  জনাব নয়া সাহেবের কারণে কাজগুলি দ্রুত হয়েছে একথা এক বাক্যে স্বীকার করতে হবে। তিনি সিঙ্গাইরের সকল দলেরই মুরুব্বি ছিলেন। তাঁকে সবাই মানতেন।
জনাব শামসুল ইসলাম খান সাহেব প্রথম জীবনে সকল দলকে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। আওয়ামী লীগের সাথেও তার ভাল সুসম্পর্ক ছিল। তিনি আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রধান প্রিষ্ঠপোষক ও সভাপতি ছিলেন। শামসুল ইসলাম খান ১৯৪৯ সালে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯৮২ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন। জনাব খান সাহেবের  দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, জিয়াউর রহমান সহ প্রবীণ নেতাদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।তিনি স্বচ্ছ ধারার রাজনীতি বিশ্বাসী করতেন।

শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়া নিরবে কাজ  করতে ভালবাসতেন। তিনি নাম চাননি, কাজ কাজ চেয়েছেন। কথা কম কাজ বেশী তাঁর স্টাইল ছিল। ধলেশ্বরী নদীতে  শহীদ রফিক সেতু নির্মাণে জনাব শামসুল ইসলাম খানের যে  ভূমিকা  ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানিকগঞ্জের কোন নেতার দ্বারাই এই সেতু নির্মাণ সম্ভব ছিল না। কিন্তু নয়া মিয়া সাহেব সে ব্রিজ নির্মাণ করে দেখিয়েছেন। আর গ্রামের আনাচে কানাচে বিদ্যুৎ  দেয়া এটাও ছিল মন্ত্রী সাহেবের এক বড় অবদান হয়তো বিদ্যুৎ আসতো কত বছর চলে যেত হিসেব নেই।জনাব খান সাহেবের কারণে বিদ্যুৎ দ্রুত এসেছে। দুর্নীতিকে এবং সন্ত্রাসকে তিনি কখনও পাত্তা দেননি।
১৯৮৮ সালে সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে সে সময় জনাব শামসুল ইসলাম খানের ছোট ছেলে হাফিজুল ইসলাম উট্টু সিঙ্গাইর থানায় রিলিফ বিলি করতে এসে নৌকা ডুবিতে মারা যায়।
জনাব শামসুল ইসলাম খানের মেজ পুত্র জনাব ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খান শান্ত বর্তমান মানিকগঞ্জ  জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।
জনাব শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়া গত ২০০৪ সালের ২২শে জানুয়ারি  এই মহান ব্যক্তি ইন্তেকাল করেন


ফজলুর রহমান, সৌদি আরব।
Cell Phone:00966534580722
Email: frahmanapple@yahoo.com
E: rahmanmedical.hall89@yahoo.com

Twitter:@Frahmantwittman

Tuesday, April 11, 2017

History of Manikganj District (মানিকগঞ্জ জেলার ইতিহাস)

মানিকগঞ্জ জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল বা একটি জেলা শহর।গাজীখালি,ধলেশ্বরী এবং কালীগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে মানিকগঞ্জ শহরটি। চিরসবুজের সমারোহ আর চিরহরিৎ বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ মানিকগঞ্জ জেলা। সংস্কৃত শব্দ “মানিক্য” থেকে এসেছে মানিক শব্দটি। মানিক এর শাব্দিক অর্থ “চুনি পদ্মরাগ” আর “গঞ্জ” একটি ফরাসী শব্দ। মানিকগঞ্জ নামকরণের সঠিক ইতিহাস আজও রহস্যাবৃত। কারণ ঐতিহাসিক বিবরণে বা নথি-পত্রে মানিকগঞ্জ নামে কোন স্থান বা মৌজার নাম পাওয়া যায়নি।
কিংবদন্তী আছে যে অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে “মানিক শাহ” নামে এক সূফী দরবেশ সিঙ্গাইর উপজেলার মানিকনগরে এসে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। পরে তিনি হরিরামপুরে দরবেশ “হায়দার শেখ” এর মাজারে চলে যান।তারপর অনেক কাহিনীর পর মানিকগঞ্জ এলাকায় পৌঁছান এবং এখানে খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। খানকায় ভক্তবৃন্দ সহ ধলেশ্বরী নদীর কারণে নানা ধরণের বণিকগণ ও সাধারণ মানুষ রাত্রী যাপন করতে এখানে আসতে থাকেন। তৈরী হয় জনবসতি ও মোকাম। এভাবেই মানিক শাহ্‌র খানকার নামে নামকরণ হয় মানিকগঞ্জ। কেউ কেউ বলে থাকেন পাঠান সরদার মানিক ঢালীর নামানুসারে হয় মানিকগঞ্জ নামটি। আবার বলা হয়ে থাকে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিশ্বাস ঘাতক মানিক চাঁদ এর নামকে প্রতিষ্ঠিত করতে ইংরেজরা এর নাম রাখেন মানিকগঞ্জ। তবে এর কোন দলিল-দস্তাবেজ নেই বা সঠিক প্রমাণ নেই। মানিক শাহের নামের যে কাহিনী ওটাকেই অধিক যুক্তিযুক্ত বলে অনেকে মনে করেন।
সবচেয়ে মজাদার তথ্য হল মানিকগঞ্জ মহকুমা আগে ( ১৮১১ সালে) ছিল ফরিদপুর জেলার অধীনে। ১৮৪৫ সালের মে মাসে মানিকগঞ্জ মহকুমা হিসেবে তৈরী করা হয়। পরবর্তীতে ১৮৫৬ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমাকে ফরিদপুর থেকে আলাদা করে ঢাকা জেলায় যুক্ত করা হয়। ১৯৮৪ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমাকে পূর্ণ জেলায় রূপান্তর করা হয় বা ঘোষণা করা হয়।মানিকগঞ্জ যখন প্রথম মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন থানা ছিল মাত্র ৩টি। তিরিশ শতকের ২য় দশকে আরও ৪টি থানা যুক্ত করে সাতটি থানায় তৈরী করা হয়। ১৯৮২ সালের ৭ই নভেম্বর থানাগুলিকে উপ-জেলায় উন্নীত করা হয়। উপজেলা গুলোঃ ১/ঘিউর ২/দৌলতপুর ৩/মানিকগঞ্জ সদর ৪/শিবালয় ৫/সাটুরিয়া ৬/সিঙ্গাইর ৭/হরিরামপুর।
মানিকগঞ্জ জেলায় সর্বমোট ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৬৫টি। গ্রাম-১৬৬৮টি। পৌরসভাঃ ২টি। মসজিদ-৩৫৭৫টি,মন্দির-১৬০, গীর্জা-১০টি, বৌদ্ধ মন্দির-৫টি।হাটবাজার-১৬৬ এবং ৫৪টি মেলা বসে সারা মানিকগঞ্জে।
সিঙ্গাইর উপজেলাঃ
সিঙ্গাইর মানিকগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। সিঙ্গাইর একটি পৌরসভাও বটে। আয়তনঃ ২১৭.৫৬ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যাঃ ২৮৭৪৫১ [ এ হিসাবটি ২০১১ সালের আদমশুমারী হিসাব অনুযায়ী।এখন ২০১৭ সালে অনেক বেশী।] উপজেলার ইউনিয়ন সর্বমোট ১১টি। -- ১/বায়রা ২/তালেবপুর ৩/সিঙ্গাইর ৪/বলধারা ৫/জামশা ৬/চারিগ্রাম ৭/শায়েস্তা ৮/জয়মন্টপ ৯/ধল্লা ১০/জামির্তা ১১/চান্দহর।
চারিগ্রাম ইউনিয়নঃ
চারিগ্রাম সিঙ্গাইর উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন। আয়তনঃ ১৪,৭০ বর্গ কিলোমিটার বা প্রায় ৬ বর্গমাইল। ২০১১ সালের আদম শুমারি হিসাব অনুযায়ী চারিগ্রামের জনংখ্যা ২০২৮৮ জন। তবে এখন অনেক বেশী।
সমগ্র মানিকগঞ্জে বহু কৃতী ব্যক্তিত্ব রয়েছে। এখানে শুধু সংক্ষিপ্ত ভাবে সিঙ্গাইর উপজেলার কিছু কৃতী ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ্য করলাম।প্রথমেই চারিগ্রামের জনাব শামসুল ইসলাম খান(নয়া মিয়া),সাবেক শিল্পমন্ত্রী।
জনাব শামসুজ্জামান খান (মাখন মিয়া), মহা পরিচালক,বাংলা একাডেমী। কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন। "যিনি সবুজ সাথী" বইটি সম্পাদনা করেছেন।( "ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাঁ। ঐ খানেতে বাস করে কানা বগীর ছা") মীর আবুল খায়ের(ঘটু ডাঃ) সাবেক সংসদ সদস্য। (জনাব ঘটু সাহেবের আমলেই সিঙ্গাইর ঘোনাপাড়া হাসপাতালটি হয়েছিল) জনাব গোলাম সারোয়ার মিলন,সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী, জনাব খলিলুর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। জনাব খলিলুর রহমান আমাদের শিক্ষক ছিলেন। তিনি পূর্বে চারিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। কন্ঠ শিল্পী মমতাজ বেগম, বর্তমান সংসদ সদস্য। এরপর সরাসরি চলে আসুন বলধারা-পারিল-নদ্যা বাজারে। পারিল মাঠের ঠিক উত্তর-পূর্ব কোণে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে শুধু একটি মাত্র বাড়ী নজরে আসবে। আর এ বাড়ীটি হচ্ছে সারা বাংলার পল্লীগীতি সম্রাজ্ঞী কন্ঠশিল্পী নীনা হামিদের বাড়ী।
আপনার হয়তো স্মরণ হতে পারে সেই গান “আমার সোনার ময়না পাখি কোন দেশেতে গেলা উইড়া” অথবা “তোমার লাগিয়া রে সদাই প্রাণ” বা “যেজন প্রেমের ভাব জানে না” এসব নীনা হামিদের জনপ্রিয় গান। নীনা হামিদ দীর্ঘদিন যাবৎ স্বামী কন্ঠশিল্পী জনাব এম.এ হামিদের সাথে আমেরিকার আটলান্টায় বসবাস করছেন।
এবার নীনা হামিদের বাড়ী থেকে পাকা সড়ক দিয়ে সোজা চলে যান উত্তর দিকে রফিক নগর স্মৃতি যাদুঘরে।এখানেই ভাষা শহীদ জনাব রফিক উদ্দিন সাহেবের পৈতৃক বাড়ী। বাংলাদেশের এবং সিঙ্গাইরের কৃতী সন্তান।
একই রাস্তায় এবার আপনাকে যেতে হবে বলধারা হাট বামে রেখে সরাসরি বলধারা-বাইমাইল সড়কে। মোটর সাইকেল,বাইসাইকেল,রিকশা এমন কি পদব্রজে যেতে পারেন এই রাস্তায়। সেখানে “রামকান্তপুর সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়” আপনাকে স্বাগত জানাবে।
এ স্কুল থেকে স্রেফ এক কিলোমিটার পরই পেয়ে যাবেন বাংলার আরেক কিংবদন্তী “নবাব সিরাজউদ্দৌলা” জীবন থেকে নেয়া” সাত ভাই চম্পা” অরুণ বরুণ কিরণমালা” “জোয়ার ভাটা” এবং “সুজন সখী”-র মত কালজয়ী সিনেমার স্রষ্টা এবং অভিনেতা-গীতিকার-সুরকার-চলচ্চিত্র নির্মাতা-নাট্যকার-প্রযোজক “জনাব খান আতাউর রহমান”(খান আতা) সাহেবের বাড়ী।
হয়তো এখন আপনি ভাবছেন জনপ্রিয় সেই গানের কথা- “মন মাঝি তুর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলাম না”। গানটির সুরকার গীতিকার খান আতাউর রহমান নিজেই। শিল্পীঃ জনাব খান আতার মেয়ে রুমানা ইসলাম। ছবির নামঃ“দিন যায় কথা থাকে”।
রাস্তার পাশেই জনাব আতাউর রহমান চির নিদ্রায় শায়িত রয়েছেন তার আপন সাড়ে তিন হাত ঘর কবরে। আপনি ওনার কবরও জিয়ারত করতে পারবেন। সেখানে আরও ২/৩টি কবর রয়েছে। এখানে আরেকটি তথ্য দেয়া যেতে পারে খান আতার স্ত্রী ছিলেন কন্ঠশিল্পী নিলুফার ইয়াসমিন।সাবিনা ইয়াসমিনের বোন এবং কন্ঠশিল্পী আগুনের মা। নিলুফার ইয়াসমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে বিএ পাশ করেন। তিনি ২০০৩ সালে ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন।
সিঙ্গাইর উপজেলায় আরো রয়েছে অনেক কিছু। নীলটেক নীলকুঠি,সাহরাইল জমিদার বাড়ী,বায়রা জজ বাড়ী। ( মনের অগোচরে অনেক তথ্যই ভুলে যাওয়া অথবা অজানা স্বাভাবিক। যদি কিছু বাদ পরে তজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এই তথ্য কেবল মাত্র সংক্ষিপ্ত।)

ফজলুর রহমান, সৌদি আরব।
Cell Phone:00966534580722
Email: frahmanapple@yahoo.com
E: rahmanmedical.hall89@yahoo.com
Twitter:@Frahmantwittman

Monday, April 3, 2017

Kusumkumari Das ("কুসুমকুমারী দাশ")

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন
"মানুষ হইতে হবে" এই তার পণ
            -----কুসুমকুমারী দাশ 

কবিতাটির লেখিকা কুসুমকুমারী দাশ। কবিতাটিকে অনেক জনকে ভুল বসতঃ জীবনানন্দ দাশের কবিতা বলে চালিয়ে দিতে দেখেছি। আসলে তথ্যটি সঠিক নয়। কবিতাটি কুসুমকুমারী দাশ “আদর্শ ছেলে” কবিতায় লিখেছেন। কুসুমকুমারী দাশ একজন বাঙালি মহিলা কবি। বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি তিনি।তাঁর আরেক বড় পরিচয় তিনি বাংলার নিটোল প্রেমের কবি “জীবনানন্দ দাশের” মাতা। জীবনানন্দ দাশ তাঁর বড় ছেলে। কবি কুসুমকুমারী দাশ বয়সের দিক থেকে বেগম রোকেয়া এবং বেগম সুফিয়া কামালের চেয়েও বয়সে বড়। তিনি ১৮৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৪৮ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাখরগঞ্জ জেলার বরিশাল শহরে(ব্রিটিশ ভারত) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অপরদিকে বেগম রোকেয়ার জন্মঃ ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ এবং মৃত্যুঃ ৯ ডিসেম্বর ১৯৩২ সালে। আর বেগম সুফিয়া কামাল জন্মগ্রহণ করেন ২০ জুন ১৯১১ এবং মৃত্যুঃ ২০ নভেম্বর ১৯৯৯। কবি কুসুমকুমারী দাশের পিতার নাম চন্দ্রনাথ দাস এবং মাতার নাম ধনমণি। ছোটবেলা থেকেই কুসুমকুমারী কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন।
বাংলায় নারীদের আসন অনেক উচ্চে। অসংখ নারী সাহিত্য চর্চা করে, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, শিক্ষাদান করে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায় সহ অনেক উচ্চস্থানে নারীরা অবদান রেখেছেন। নারীকে আজ ছোট করে দেখার উপায় নেই। দৃষ্টি কটুদের ভাল লাগা না লাগা বা কারও কারও নারী রাজনীতি পছন্দ হওয়া না হওয়া অথবা কে কোন রাজনীতিতে বিশ্বাসী সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। সেই কন্ট্রভার্সি বা ডিবেটে যাব না। নানা মুনীর নানা ব্যাখ্যা-ব্যাপকতা-বিতর্ক থাকতেই পারে বা দ্বিমত পোষণ করতে পারে। আর সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি এখানে মুক্ত আলোচনার বিবেচনায় নিয়ে আসতে চাই নারীকে। হিংসা বিদ্বেষ নয়। পাপ-পূণ্যের বিষয় নয়। নারী সম্মানের পাত্র সেটাই উপস্থাপন করা এবং নর-নারী সমান নজরে দেখা সেটাই আমার মুক্ষ উদ্দেশ্য। আর সেজন্যই ফিরে যেতে চাই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের “নারী” কবিতায়।
“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”

ডাঃ ফজলুর রহমান, সৌদি আরব।
Cell Phone:00966534580722
Email: frahmanapple@yahoo.com
E: rahmanmedical.hall89@yahoo.com
Twitter:@Frahmantwittman

Saturday, March 25, 2017

26th March Bangladesh's Independence Day(26 মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস)

আজ ২৬শে মার্চ। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস এবং জাতীয় দিবস।১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ দিনটি ছিল শুক্রবার। বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র জারি করা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন আজ। ১৯৭১ সালের এদিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিলো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত বিবৃতিটি আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান সর্বপ্রথম পাঠ করেন। এর একদিন রে ২৭শে মার্চ তত্কালীন মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন। চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যে ঘোষণা পাঠ করা হয় সে ঘোষণাটি ছিল এরকম-  [ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানThe Government of the Sovereign State of Bangladesh, on behalf of our great national leader, the supreme commander of Bangladesh, Sheikh Mujibur Rahman, do hereby proclaim the independence of Bangladesh. It is further proclaimed that Sheikh Mujibur Rahman is the sole leader of the elected representatives of the 75 million people of Bangladesh....................................................... বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার কপি ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে হ্যান্ডবিল আকারে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়েছিল ]   
বাংলাদেশের স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি। এই সংগ্রামের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ও গৌরবোজ্জ্বল একটি অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ৭ই  মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে(বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ঘোষণা দিয়ে গোটা জাতিকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করেন। তিনি আরো বলেন, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে মূলত ৭ই মার্চই আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে যায়। ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত ১২টার পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে মাত্র। পাক হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের আগে তিনি স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে যান। এরপর এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতিকে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়।

বঙ্গবন্ধুক পাকিস্তানের করাচি শহরের মিয়াউয়ালি কারাগারে বন্দী রাখা হয়বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে কারাগারে নিঃসঙ্গ। তার জন্য ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। কবরও খোঁড়া হয়েছিল বিচারের নামে প্রহসনপর্বও চলেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তখন সাড়ে সাত কোটি বাঙালিসহ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম। বঙ্গবন্ধুর নামে বাঙালি যুদ্ধজয়ের মনোরথের ধ্বজা উড়িয়ে দিয়েছিল। শত্রু হননে মত্ত হয়েছিল বাঙালি। বঙ্গবন্ধু সেই মার্চেই পথ দেখিয়েছিলেন। তাই সেস্নাগান উঠেছিল, বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো

Monday, February 20, 2017

International Mother Language Day-2017(আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস)

আজ ২১ ফেব্রুয়ারী অমর একুশেমহান শহীদ দিবস ১৯৫২ থেকে ২০১৭ সাল। সুদীর্ঘ পথ চলা।২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন।  ইহা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও এখন পরিচিত। বাংলা ভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে সমাবেশ-মিছিল ইত্যাদি বে-আইনী ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক,সালামবরকতজব্বার, শফিউর, অহিদুল্লাহ  সহ আরও অনেকে। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
সেজন্য  প্রতি বছরই  এই একুশে ফেব্রুয়ারি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে শহিদ দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়ে থাকে। মায়ের ভাষাকে রক্ষা করতে  বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে এ জাতি। এ অধিকার একটা জাতি লাভ করে স্বয়ং স্রষ্টা থেকেতাইতো মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদী সাহেব এক বক্তিতায় বলেছেন একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা জরুরী এবং বাংলা ভাষা আল্লাহপাক এর দান। ভাষার জন্য জীবন দান এ বিরল আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।ইউনেস্কোর ঘোষণায় বলা হয়- 21 February is proclaimed international mother language day througout the world to commemorate the martyrs who sacrificed their lives on this day in 1952. এখন তাই প্রতিবছর এই দিনটি বিশ্বের ১৮৮টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয় বলতে গেলে এটা এখন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হয়ে গেছে। পৃথিবীতে বাংলাদেশই একটিমাত্র  দেশ  যারা নিজেদের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। বাংলা  ভাষাকে রক্ষা করেছেন ভাষার জন্য যারা আজ থেকে ৬৫ বছর আগে একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রাণ দিয়েছেন তাদের নাম যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন অমর হয়ে থাকবে এই বিশ্বব্রম্মান্ডে। আমি গর্বিত যে আমার পাশের গ্রাম বলধারা ইউনিয়নের পাড়িলের রফিক নগর গ্রামে   জন্মেছিলেন  বীর শহীদ রফিক সাহেব। রফিক উদ্দিন ১৯২৬ সালের ৩০ শে অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করেন ২১শে ফেব্রুয়ারি১৯৫২ সালে ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন।   রফিক উদ্দিনের পিতার নাম আবদুল লতিফ ও মাতার নাম রাফিজা খাতুন। তাঁর পিতা আবদুল লতিফ ছিলেন ব্যবসায়ী, কলকাতায় ব্যবসা করতেন।রফিকরা ছিল পাঁচ ভাই ও দুই বোন। ভাইদের মধ্যে রফিক ছিল সবার বড়। চার ভাই, আবদুর রশীদ (১৯৩১-১৯৮৭) আবদুল খালেক (১৯৩৪), বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম (১৯৪৩-১৯৭২), খোরশেদ আলম (১৯৪৭) এবং বোন আলেয়া বেগম (১৯৩৮) জাহানারা বেগম (১৯৪৫)। রফিক ছিল পিতা-মাতার প্রথম সন্তান। শৈশবে গ্রামের স্কুলেই তিনি লেখাপড়া করেন।  তার নামানুসারেই গ্রামটির নাম রাখা হয়েছে রফিক নগর।এখানে শহীদ রফিকের নামে একটি স্মৃতি যাদুঘররয়েছে। প্রতিবছরই  একুশে ফেব্রুয়ারীতে এখানে মেলা বসে। মেলায় হাজার হাজার নারী পুরুষের ঢল নামে।আমাদের মানিগঞ্জ শহরের মেইন  রাস্তাটিও শহীদ রফিকের নামেই শহীদ রফিক সড়ক রাখা হয়েছে।
মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ দিন ভোরে সর্বস্তরের মানুষ খালি পায়ে  অংশগ্রহণ করে  এবং শহীদ মিনারে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। দোয়েল চত্বর, চানখাঁরপুল, টিএসসি, পলাশী মোড় থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ী চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সারাদিন মানুষ শোকের চিহ্নস্বরূপ কালো ব্যাজ ধারণ করে। এছাড়া আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান  হয়ে থাকে।ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি  টেলিভিশন সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দিবসটির তাৎপর্য্য তুলে ধরা হয়। দৈনিক সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হয় পুরো ফেব্রুয়ারি মাস ব্যাপী সরকার বাংলা ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একুশে পদক প্রদান করে থাকে
একুশ নিয়ে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি গানটি লিখেন আবদুল গাফফার চৌধুরী গানটিতে প্রথমে সুরারোপ করেন আব্দুল লতিফ পরবর্তিতে আলতাফ মাহমুদ আবার নতুন করে সুরারোপ করেন। সেই থেকে ওটা হয়ে যায় একুশের  গান। বর্তমানে আলতাফ মাহমুদের সুর করা গানটিই গাওয়া হয়। জহির রায়হান তাঁর জীবন থেকে নেয়া সিনেমায় এ গানটি ব্যবহার করার পর এর জনপ্রিয়তা  আরো বেরে যায়। এ গানটি সুইডিশ এবং জাপানি ভাষায় অনুবাদও হয়েছে। সেখানে তারাও গায় এই গানটি।
 ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের অহংকার। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক।এটাকে বাঙালি ভুলে থাকতে পারে না

সবশেষে বলতে চাই বিভিন্ন ভাষা শিক্ষালাভ করা চর্চা করা দূষের কিছু নয়তাতে জ্ঞান বাড়েকিন্তু  নিজের মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে নয়নিজের মাতৃভাষা সঠিক ও শুদ্ধভাবে  প্রয়োগ-ব্যবহার-অনুশীলন করা প্রয়োজন সবার আগেপ্রত্যাশা রাখি আমরা সবাই শুদ্ধ ভাবে বাংলা উচচারণে কথা বলবো, নিজের সন্তানদের শুদ্ধ বাংলা শিক্ষা দিব আমরা সবাই গুড মর্নিং  না বলে শুভ সকাল- শুভ সন্ধ্যা-শুভ রাত্রি এভাবে বলতে অভ্যস্ত হবো ধন্যবাদ সবাইকে শুভ সকাল হে মহান শহীদ দিবস

ফজলুর রহমান, সৌদি আরব।
Cell Phone:00966534580722 
Email: frahmanapple@yahoo.com
Twitter:@Frahmantwittman