প্রকৃতির অপরূপ লীলা ভূমি বাংলাদেশ।কিন্তু আজ উজাড় হচ্ছে বন।দেশে আজকাল বিলীন হচ্ছে চির সবুজের সমারোহ। নেই ততটা এভারগ্রীন বা চিরহরিৎ অভয়ারণ্য।সবুজ-সজীব-সতেজ বন বনানী তেমন চোখে পরে না।পাখ-পাখালীর কল-কাকলী,কাকের কা কা ডাক, সেতো স্বপ্নেও ভাবা যায় না এখন। ময়না,তোতা,শালিক,ডাহুক,ফিঙ্গে,ঘুঘু,মাছরাঙ্গা, শ্যামা,কোয়েল,কাকাতুয়া, ওদের তো দেখাই পাই না। বাংলার মুখ উজ্জ্বল করে জাতীয় পাখির খাতায় নাম লেখালো যে “দোয়েল” আজ সে কোথায়? আমার কৈশোরে কাজই ছিল দোয়েল পাখির ডিম খুঁজ করা। বাদামি-বেগুন-সবুজ আর কালো রঙের ছিটা দেখতাম দোয়েলের ডিমে।মোটা গাছের খোড়লে বাসা তৈরী করে দোয়েল। দোয়েলের বাসায় পেয়ে যেতাম এক জোড়া ডিম।ডুমুরের দু’পাতার এক কক্ষ বিশিষ্ট
ঘর বানায় টুনা আর বধূ টুনি। এদের কাছ
থেকেও পেতাম মাত্র দু’টি ডিম। টুনি বড়ই কৃপন, নাকি সৃষ্টি কর্তার হুকুম জারি দু’ডিম পাড়ার
জানি না।আর এসব ডিম যোগারে আমার সঙ্গী ছিল ফুফাতো বোন “শেফালি বেগম”।নানা বাড়ীর
নারিকেল গাছে দেখতাম শত শত আর্কিটেক্ট বাবুই।বাবুই পাখির
কিচির মিচির শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যেত।কি নিঁখুত নির্মাণশৈলী
তার বাসার। কি চমৎকার সেই বুনন।ছোট ছোট
বন্ধুরা বলতাম বাবুই পাখির বাসার বুনন খুলতে পারলে নাকি সোনা পাওয়া যাবে। দু’তিন দিন ধরে সোনার হরীণের প্রত্যাশায় খুলতাম সেই বাসা। ধুর ছাই! সোনা পেলাম কৈ?।বাবুই পাখি নিয়ে তাইতো কবি “রজনীকান্ত
সেন” লিখেছেন—
……………………………
বাবুই হাসিয়া কহে- “সন্দেহ কি তায়?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।।
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।।
আজ সে সব পাখি বিলীন প্রায়। চৈতালী
ফসলের মাঠ জুড়ে থাকতো ধবল বক।নদীর বাঁকে ছোট মাছ শিকারে ধূসর রঙের যে বক দেখতাম তাকে ডাকতাম “কানি বক”।বড় বড় বৃক্ষের মগ ডালে এসে বসতো অতিথি পাখি।কিছু ভদ্রবেশী বন্দুকধারী শিকার করতো সে সব অতিথি পাখি।অবশ্য সেজন্য মানুষের গালমন্দও খেতো। দল বেঁধে আকাশে উড়তো কত
সব পক্ষীকূল। এক সময় গ্রাম বাংলার নদী-নালা- খাল-বিল,পুকুর-জলাশয়
ভড়া
ছিল পক্ষীকূলে।আজ সেসব কোথায়? দেখা পাইনা গাংচিলের।শকুন,চিল অদৃশ্য। পেঁচারাও পালালো যেন কোথায়! বসন্তের কোকিলও কমে গেছে।কোকিল ডাকা ভোরের আওয়াজ আর শোনতে পাইনা। শুধু পাখি কেন কত কিছুই
তো আজ বিলীন-বিলুপ্তি। হারিয়ে যাচ্ছে কত কিছু। সে ভাবনা কে ভাবে। ইলিশে নেই স্বাদ-গন্ধ, মাশ কলাইয়ে নেই সু-ঘ্রাণ।সবজিতে নেই সজীবতা, নেই সুস্বাদ।আছে কেবল বিষ। আর হাইব্রিড।ফল ফলাদি তে নেই এনার্জি, নেই মিষ্টি স্বাদ।আছে শুধু কেমিকেল, কার্বাইড।আজকাল অনেকেই নিজ বাড়ীতে ফলবান বৃক্ষ লাগাতে পছন্দ করে না। লজ্জা পায়।লোকে নাকি ছোট ভাববে!! ছিঃ কি বিশ্রী কথা! নিজের বাড়ীতে বৃক্ষ রোপণ নাকি ছোট কাজ?
বাড়ীর আঙিনায় থাকবে হাজারো ফুল-ফলের বৃক্ষরাজি।
“নিজের গাছের ফল নিজে খাবো,
বিষাক্ত ফল কিনে না আনবো”।
এই শ্লোগান সবার হওয়া উচিৎ।
Very nice Doctor saab.
ReplyDelete