নূরুনীগঙ্গা আমার নাম।আমি একটি নদী।আমি গাজীখালি
কালিগঙ্গা থেকে উঠে এসেছি।আমি মানিকগঞ্জ জেলাধীন, সিঙ্গাইর থানার- চারিগ্রাম হাইস্কুলের তীর ঘেসে জাইল্লা, পাড়িল, এবং গোলাইডাঙ্গা ও বলধারা ইউনিয়নের
কিয়দংশ হয়ে মিতরা, পালড়া হয়ে মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীতে পৌঁঁছে গেছি।পিছনে বাম দিকে ইচ্ছে করলে আমি টাকিমারা দিয়েও আবার কালিগঙ্গায় ফেরত যেতে
পারি। এই আমার মোটামুটি পরিচয়। এখন আমার রূপ জৌলুস তেমন না থাকলেও এক সময় আমার ছিল
ভরা যৌবণ।পানিতে ছিলাম পরিপূর্ণ, টইটুম্বুর।এখন আমার
সুনাম ততটা নেই।কেউ আমাকে মনে করে না। আমাকে নিয়ে ভাবে না। সেজন্য আমি কিছুটা সঙ্কিত, লজ্জিত।যখন আমি অথৈ জলে সম্পদশালী ছিলাম
তখন আমার স্রোতের ছিল প্রচন্ড দাপট।সব কিছু ভাসিয়ে নেয়ার ক্ষমতা আমার ছিল।আমার
বুকে পাল তুলে কত নৌকা চলে যেত তার হিসেব নেই। সেই সময়ে এই চারিগ্রাম, দাশেরহাটি সহ আশপাশের সকল লোকজন লঞ্চ/স্টিমারে আমার বুকে ভেসে ভেসে
তারা ঢাকা যেত। আমি ছাড়া সদর ঘাট যাওয়া কারও অন্য কোন উপায় ছিল না।আমিই তখন এক মাত্র ভরসা।আজ এরা সব ভুলে
গেছে আমাকে। আমার মত অভাগিনী নূরুনীগঙ্গাকে তারা মনে রাখে না। সেলুকাস! সত্যি কি বিচিত্র এই দেশ।
বিচিত্র এসব লোকজন। আমি কি তাদের জন্য কিছুই করিনি। আমার দ্বারা কি তারা উপকৃত হয়নি? যখন বড় বড় লঞ্চ আমার বুক চিরে চলে যেত সদরঘাট তখন তোমরা কোথায় ছিলে? দেখনি “আনন্দ লঞ্চ” এর এত নাম ছিল তখন কার জন্য? আমার জন্য। আমিই “আনন্দ লঞ্চ” করে শত শত লোক ঢাকা শহরে যেতে সাহায্য করতাম। কোথায় ছিল আজকের এইসব বাস/কোস্টার/মিনিবাস/ মাইক্রো/ ট্যাক্সি? কিছুই ছিল না তখন। আমিই ছিলাম তখন এক মাত্র ভরসা। বিপদের সময় তো আমি ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু দুঃখ হয় আজ আমার বুকে পানি নেই। শুকিয়ে গেছে পুরোটা দেহ । আজ আমার বুক চৌচির। চৈত্রের দাবদাহে আমি ক্ষত-বিক্ষত। আমার উপর অজস্র কচুরিপানা জন্মেছে। যৎ সামান্য পানি থাকে সেটাও মানুষ শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে লোকজন আমার উপর সন্ধ্যায় হুমড়ি খেয়ে পরে।আমি বিস্মিত হই কিছুটা!! লজ্জা পাই খানিকটা!! আচল দিয়ে মুখ ঢাকতে ইচ্ছে করে। এদিকে আমার উপর দিয়ে পাকা চমৎকার কংক্রিট ব্রীজ হয়েছে ২/৩টি। হাজারো লোকজন চলাচল করে ব্রীজের উপর দিয়ে। ভাবতে ভালই লাগে। কিন্তু কিছু বেরসিক নির্দয়া মানব প্রাণী ব্রীজ থেকে বস্তা বস্তা ডিমের খোসা ফেলতেও ছাড়ে না।
আমাকে নোংড়া করে। আমাকে
দুর্গন্ধযুক্ত করে ফেলে। বলার নেই কেউ। সবাই যেন দেখেও না
দেখার ভান করে। বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে। আমার মনের বেদনা কেউ বুঝে না।আমি নিরবে চোখের
অশ্রু বিসর্জন দেই। আমার বুক চিরে ইরি, বোরো ধান চাষ হয়।মনে দুঃখ নেই।মনকে বুঝায়ে বলি
যাক ধান চাষাবাদ তো জনগণের মঙ্গলের জন্য বৈকি। তবু আমি হতাশ
হইনি। আশাও ছাড়িনি।একদিন হয়তবা আমি পুরনো জীবন-যৌবন ফিরে পাব। কোন সরকার হয়তো
আমাকে ড্রেজার দিয়ে গভীর থেকে গভীর করবে। সেই আশায় বুক
বাধি। ক্লান্ত-শ্রান্ত মনকে শান্তনা দেই, আশ্বস্ত করি যে, আবার আমি হয়তোবা হাসবো আনন্দের হাসি। সেই
প্রতীক্ষায় আছি অধীর আগ্রহে। এইতো জৈষ্ঠ মাস আমার দেহে
জোয়ার আসতে শুরু করেছে।
আমি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাব যৌবন জোয়ারে। জলে ভড়ে যাবে আমার দুই কোল। আমাকে দেখতে আসবে
পথচারী। পাখীরা উড়ে যাবে আমার উপর দিয়ে। গাংচিল-মাছরাঙ্গা- আর বকেরা ফের মিলতে
আসবে আমার সাথে। আমার দুই তীরে লোকজন দাড়িয়ে থাকবে।সেই আনন্দে
আমি আত্মহারা। সত্যি আমি আজ মুগ্ধ। আমি বাঁধন
হারা। পাগল পারা। আমি মুক্ত বিহঙ্গ। আমি উন্মাদ। আমি অতি শীঘ্রই হব ভড়া যৌবনা !!! আমি
আজ তৃপ্ত। আমি আনন্দিত। তাইতো আমি হাসি আনন্দের হাসি হা হা হা হা হা হা ।
বিচিত্র এসব লোকজন। আমি কি তাদের জন্য কিছুই করিনি। আমার দ্বারা কি তারা উপকৃত হয়নি? যখন বড় বড় লঞ্চ আমার বুক চিরে চলে যেত সদরঘাট তখন তোমরা কোথায় ছিলে? দেখনি “আনন্দ লঞ্চ” এর এত নাম ছিল তখন কার জন্য? আমার জন্য। আমিই “আনন্দ লঞ্চ” করে শত শত লোক ঢাকা শহরে যেতে সাহায্য করতাম। কোথায় ছিল আজকের এইসব বাস/কোস্টার/মিনিবাস/ মাইক্রো/ ট্যাক্সি? কিছুই ছিল না তখন। আমিই ছিলাম তখন এক মাত্র ভরসা। বিপদের সময় তো আমি ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু দুঃখ হয় আজ আমার বুকে পানি নেই। শুকিয়ে গেছে পুরোটা দেহ । আজ আমার বুক চৌচির। চৈত্রের দাবদাহে আমি ক্ষত-বিক্ষত। আমার উপর অজস্র কচুরিপানা জন্মেছে। যৎ সামান্য পানি থাকে সেটাও মানুষ শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে লোকজন আমার উপর সন্ধ্যায় হুমড়ি খেয়ে পরে।আমি বিস্মিত হই কিছুটা!! লজ্জা পাই খানিকটা!! আচল দিয়ে মুখ ঢাকতে ইচ্ছে করে। এদিকে আমার উপর দিয়ে পাকা চমৎকার কংক্রিট ব্রীজ হয়েছে ২/৩টি। হাজারো লোকজন চলাচল করে ব্রীজের উপর দিয়ে। ভাবতে ভালই লাগে। কিন্তু কিছু বেরসিক নির্দয়া মানব প্রাণী ব্রীজ থেকে বস্তা বস্তা ডিমের খোসা ফেলতেও ছাড়ে না।
------ডাঃফজলুর রহমান, সৌদি আরব।
৩১/৫/২০১৬
No comments:
Post a Comment