Tuesday, April 11, 2017

History of Manikganj District (মানিকগঞ্জ জেলার ইতিহাস)

মানিকগঞ্জ জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল বা একটি জেলা শহর।গাজীখালি,ধলেশ্বরী এবং কালীগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে মানিকগঞ্জ শহরটি। চিরসবুজের সমারোহ আর চিরহরিৎ বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ মানিকগঞ্জ জেলা। সংস্কৃত শব্দ “মানিক্য” থেকে এসেছে মানিক শব্দটি। মানিক এর শাব্দিক অর্থ “চুনি পদ্মরাগ” আর “গঞ্জ” একটি ফরাসী শব্দ। মানিকগঞ্জ নামকরণের সঠিক ইতিহাস আজও রহস্যাবৃত। কারণ ঐতিহাসিক বিবরণে বা নথি-পত্রে মানিকগঞ্জ নামে কোন স্থান বা মৌজার নাম পাওয়া যায়নি।
কিংবদন্তী আছে যে অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে “মানিক শাহ” নামে এক সূফী দরবেশ সিঙ্গাইর উপজেলার মানিকনগরে এসে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। পরে তিনি হরিরামপুরে দরবেশ “হায়দার শেখ” এর মাজারে চলে যান।তারপর অনেক কাহিনীর পর মানিকগঞ্জ এলাকায় পৌঁছান এবং এখানে খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। খানকায় ভক্তবৃন্দ সহ ধলেশ্বরী নদীর কারণে নানা ধরণের বণিকগণ ও সাধারণ মানুষ রাত্রী যাপন করতে এখানে আসতে থাকেন। তৈরী হয় জনবসতি ও মোকাম। এভাবেই মানিক শাহ্‌র খানকার নামে নামকরণ হয় মানিকগঞ্জ। কেউ কেউ বলে থাকেন পাঠান সরদার মানিক ঢালীর নামানুসারে হয় মানিকগঞ্জ নামটি। আবার বলা হয়ে থাকে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিশ্বাস ঘাতক মানিক চাঁদ এর নামকে প্রতিষ্ঠিত করতে ইংরেজরা এর নাম রাখেন মানিকগঞ্জ। তবে এর কোন দলিল-দস্তাবেজ নেই বা সঠিক প্রমাণ নেই। মানিক শাহের নামের যে কাহিনী ওটাকেই অধিক যুক্তিযুক্ত বলে অনেকে মনে করেন।
সবচেয়ে মজাদার তথ্য হল মানিকগঞ্জ মহকুমা আগে ( ১৮১১ সালে) ছিল ফরিদপুর জেলার অধীনে। ১৮৪৫ সালের মে মাসে মানিকগঞ্জ মহকুমা হিসেবে তৈরী করা হয়। পরবর্তীতে ১৮৫৬ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমাকে ফরিদপুর থেকে আলাদা করে ঢাকা জেলায় যুক্ত করা হয়। ১৯৮৪ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমাকে পূর্ণ জেলায় রূপান্তর করা হয় বা ঘোষণা করা হয়।মানিকগঞ্জ যখন প্রথম মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন থানা ছিল মাত্র ৩টি। তিরিশ শতকের ২য় দশকে আরও ৪টি থানা যুক্ত করে সাতটি থানায় তৈরী করা হয়। ১৯৮২ সালের ৭ই নভেম্বর থানাগুলিকে উপ-জেলায় উন্নীত করা হয়। উপজেলা গুলোঃ ১/ঘিউর ২/দৌলতপুর ৩/মানিকগঞ্জ সদর ৪/শিবালয় ৫/সাটুরিয়া ৬/সিঙ্গাইর ৭/হরিরামপুর।
মানিকগঞ্জ জেলায় সর্বমোট ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৬৫টি। গ্রাম-১৬৬৮টি। পৌরসভাঃ ২টি। মসজিদ-৩৫৭৫টি,মন্দির-১৬০, গীর্জা-১০টি, বৌদ্ধ মন্দির-৫টি।হাটবাজার-১৬৬ এবং ৫৪টি মেলা বসে সারা মানিকগঞ্জে।
সিঙ্গাইর উপজেলাঃ
সিঙ্গাইর মানিকগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। সিঙ্গাইর একটি পৌরসভাও বটে। আয়তনঃ ২১৭.৫৬ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যাঃ ২৮৭৪৫১ [ এ হিসাবটি ২০১১ সালের আদমশুমারী হিসাব অনুযায়ী।এখন ২০১৭ সালে অনেক বেশী।] উপজেলার ইউনিয়ন সর্বমোট ১১টি। -- ১/বায়রা ২/তালেবপুর ৩/সিঙ্গাইর ৪/বলধারা ৫/জামশা ৬/চারিগ্রাম ৭/শায়েস্তা ৮/জয়মন্টপ ৯/ধল্লা ১০/জামির্তা ১১/চান্দহর।
চারিগ্রাম ইউনিয়নঃ
চারিগ্রাম সিঙ্গাইর উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন। আয়তনঃ ১৪,৭০ বর্গ কিলোমিটার বা প্রায় ৬ বর্গমাইল। ২০১১ সালের আদম শুমারি হিসাব অনুযায়ী চারিগ্রামের জনংখ্যা ২০২৮৮ জন। তবে এখন অনেক বেশী।
সমগ্র মানিকগঞ্জে বহু কৃতী ব্যক্তিত্ব রয়েছে। এখানে শুধু সংক্ষিপ্ত ভাবে সিঙ্গাইর উপজেলার কিছু কৃতী ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ্য করলাম।প্রথমেই চারিগ্রামের জনাব শামসুল ইসলাম খান(নয়া মিয়া),সাবেক শিল্পমন্ত্রী।
জনাব শামসুজ্জামান খান (মাখন মিয়া), মহা পরিচালক,বাংলা একাডেমী। কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন। "যিনি সবুজ সাথী" বইটি সম্পাদনা করেছেন।( "ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাঁ। ঐ খানেতে বাস করে কানা বগীর ছা") মীর আবুল খায়ের(ঘটু ডাঃ) সাবেক সংসদ সদস্য। (জনাব ঘটু সাহেবের আমলেই সিঙ্গাইর ঘোনাপাড়া হাসপাতালটি হয়েছিল) জনাব গোলাম সারোয়ার মিলন,সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী, জনাব খলিলুর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। জনাব খলিলুর রহমান আমাদের শিক্ষক ছিলেন। তিনি পূর্বে চারিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। কন্ঠ শিল্পী মমতাজ বেগম, বর্তমান সংসদ সদস্য। এরপর সরাসরি চলে আসুন বলধারা-পারিল-নদ্যা বাজারে। পারিল মাঠের ঠিক উত্তর-পূর্ব কোণে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে শুধু একটি মাত্র বাড়ী নজরে আসবে। আর এ বাড়ীটি হচ্ছে সারা বাংলার পল্লীগীতি সম্রাজ্ঞী কন্ঠশিল্পী নীনা হামিদের বাড়ী।
আপনার হয়তো স্মরণ হতে পারে সেই গান “আমার সোনার ময়না পাখি কোন দেশেতে গেলা উইড়া” অথবা “তোমার লাগিয়া রে সদাই প্রাণ” বা “যেজন প্রেমের ভাব জানে না” এসব নীনা হামিদের জনপ্রিয় গান। নীনা হামিদ দীর্ঘদিন যাবৎ স্বামী কন্ঠশিল্পী জনাব এম.এ হামিদের সাথে আমেরিকার আটলান্টায় বসবাস করছেন।
এবার নীনা হামিদের বাড়ী থেকে পাকা সড়ক দিয়ে সোজা চলে যান উত্তর দিকে রফিক নগর স্মৃতি যাদুঘরে।এখানেই ভাষা শহীদ জনাব রফিক উদ্দিন সাহেবের পৈতৃক বাড়ী। বাংলাদেশের এবং সিঙ্গাইরের কৃতী সন্তান।
একই রাস্তায় এবার আপনাকে যেতে হবে বলধারা হাট বামে রেখে সরাসরি বলধারা-বাইমাইল সড়কে। মোটর সাইকেল,বাইসাইকেল,রিকশা এমন কি পদব্রজে যেতে পারেন এই রাস্তায়। সেখানে “রামকান্তপুর সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়” আপনাকে স্বাগত জানাবে।
এ স্কুল থেকে স্রেফ এক কিলোমিটার পরই পেয়ে যাবেন বাংলার আরেক কিংবদন্তী “নবাব সিরাজউদ্দৌলা” জীবন থেকে নেয়া” সাত ভাই চম্পা” অরুণ বরুণ কিরণমালা” “জোয়ার ভাটা” এবং “সুজন সখী”-র মত কালজয়ী সিনেমার স্রষ্টা এবং অভিনেতা-গীতিকার-সুরকার-চলচ্চিত্র নির্মাতা-নাট্যকার-প্রযোজক “জনাব খান আতাউর রহমান”(খান আতা) সাহেবের বাড়ী।
হয়তো এখন আপনি ভাবছেন জনপ্রিয় সেই গানের কথা- “মন মাঝি তুর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলাম না”। গানটির সুরকার গীতিকার খান আতাউর রহমান নিজেই। শিল্পীঃ জনাব খান আতার মেয়ে রুমানা ইসলাম। ছবির নামঃ“দিন যায় কথা থাকে”।
রাস্তার পাশেই জনাব আতাউর রহমান চির নিদ্রায় শায়িত রয়েছেন তার আপন সাড়ে তিন হাত ঘর কবরে। আপনি ওনার কবরও জিয়ারত করতে পারবেন। সেখানে আরও ২/৩টি কবর রয়েছে। এখানে আরেকটি তথ্য দেয়া যেতে পারে খান আতার স্ত্রী ছিলেন কন্ঠশিল্পী নিলুফার ইয়াসমিন।সাবিনা ইয়াসমিনের বোন এবং কন্ঠশিল্পী আগুনের মা। নিলুফার ইয়াসমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে বিএ পাশ করেন। তিনি ২০০৩ সালে ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন।
সিঙ্গাইর উপজেলায় আরো রয়েছে অনেক কিছু। নীলটেক নীলকুঠি,সাহরাইল জমিদার বাড়ী,বায়রা জজ বাড়ী। ( মনের অগোচরে অনেক তথ্যই ভুলে যাওয়া অথবা অজানা স্বাভাবিক। যদি কিছু বাদ পরে তজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এই তথ্য কেবল মাত্র সংক্ষিপ্ত।)

ফজলুর রহমান, সৌদি আরব।
Cell Phone:00966534580722
Email: frahmanapple@yahoo.com
E: rahmanmedical.hall89@yahoo.com
Twitter:@Frahmantwittman

No comments:

Post a Comment