Thursday, November 17, 2016

বাংলার আধুনিক কবি “জীবনানন্দ দাশ”(The Modern poet of Bengal “Jibananada Das” )


"আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে--এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়
-- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল
-ছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হ'
--কিশোরীর--ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলায় নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;

আজকের প্রসঙ্গ আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়েকবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত এবং দাদার নাম সর্বানন্দ দাশগুপ্ত জীবনানন্দ দাশের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ঢাকার বিক্রমপুরের অধিবাসী তাঁর দাদা সর্বানন্দ দাশগুপ্ত  বিক্রমপুর থেকে স্থানান্তর হয়ে  বরিশালে বসবাস শুরু করেনজীবনানন্দ দাশকে বলা হয় রূপসী বাংলার কবি, প্রেমের কবি এবং বাংলা সাহিত্যের একজন শুদ্ধতম কবিতিনি একাধারে কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপকতিনি বাংলা সাহিত্যের একজন আধুনিক কবি ছিলেন তিনি ১৯১৫ সালে ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক অতপর  দুই বছর পর আই.  পাশ করেন এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজীতে(অনার্স) বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯২১ সালে  কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে এম. . করেন(দ্বিতীয় বিভাগ)তিনি কিছুদিন পড়েছিলেন আবার পরে সেটা বাদ দেনকবি জীবনানন্দ দাশ ১৯৩০ সনের ৯ই মে  লাবণ্য দেবীকে বিবাহ করেন লাবণ্য দেবী তখন ইডেন কলেজের ছাত্রী বিয়েটি হয়েছিল ঢাকার সদরঘাট  রামমোহন লাইব্রেরিতে।
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় উঠে এসেছে বাংলার প্রকৃত রূপ তাঁর কবিতায় গ্রাম-বাংলার নদী,মাঠ-ঘাট-ঘাস-লতা-পাতা-বন-জঙ্গল-পাখি-আকাশ-বাতাস-মাটি সবই স্থান পেয়েছে কি নেই জীবনানন্দ দাশের কাব্যেবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ  রূপ তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে তাঁর কবিতায় শব্দ চয়ন-উপমা-প্রকৃতিকে ঢেলে সাজানো এক নজীরবিহীন নৈপুন্য  কবি বুদ্ধদেব বসু, অনেক লিখেছেন জীবনানন্দ দাশকে নিয়েবাংলার রূপে মুগ্ধ হয়ে  জীবনানন্দ দাশ এভাবে বলেছেন যে,

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,
তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর 

জীবনানন্দ দাশ বাংলার এক ক্ষনজন্মা কথাসাহিত্যিকতাঁর সাহিত্যের ভান্ডার এতটাই সমৃদ্ধ যে যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন বাংলা সাহিত্যে তিনি বিরাজ করবেন অত্যন্ত দাপটের সাথেতাঁর কবিতা বনলতা সেন বেঁচে থাকবে মানুষের হৃদয়ে হাজার  হাজার বছর রূপসী বাংলা কবিতা গ্রন্থ  জীবনানন্দ দাশের এক অনবদ্য সৃষ্টি কবিতা তো অনেকেই লিখছেন, লিখবেন কিন্তু কবিতার মত কবিতা লিখা কি অত সহজ? তাই তো  জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন,

          সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি
জীবনানন্দ দাশের  গ্রন্থের মধ্যে বনলতা সেন, রূপসী বাংলা, ঝরা পালক,ধূসর পাণ্ডুলিপি,মহাপৃথিবী,বেলা অবেলা কালবেলা,সাতটি তারার তিমির বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

এই বনলতা সেন কবিতায় কবির রোমান্টিক-নিগূঢ় প্রেমের এক চমৎকার চিত্র ফুটে উঠেছে  অন্যান্ন বেশ কিছু নারীর নাম এসেছে তার কবিতায় যেমন বনলতা সেন,অমিতা সেন, সুরঞ্জনা, সুচেতনা, সরোজনী, শেফালিকা বোস,শ্যামলী  এবং সুজাতা
জীবিত অবস্থায়  তিনি অতটা  খ্যাতি অর্জন করতে পারেননি কারণ তিনি ছিলেন  প্রচারবিমুখ এক কবি তিনি জনপ্রিয় বিখ্যাত হয়ে উঠলেন মৃত্যুর পর পাঠক সমাজ কবির মৃত্যুর পর বুঝতে পারলেন আসলে তিনি কত বড় মাপের কবি ছিলেন

জীবনানন্দ দাশের কবিতা আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়কবিতাটি  আমার  হদয় কেড়েছিল যখন আমার বয়স মাত্র  দশ বছর।ক্লাস টু এর ছাত্র। (সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ জেলা।১৯৭৭ সাল) আমি  সাটুরিয়া শুকনো নদীতে সারি সারি ধানের গুচ্ছ আর কিছু পাখি দেখে মনের অজান্তে পড়তেছিলাম কবিতাটি(আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়”) আমি বিমোহিত হয়ে পড়েছিলাম পড়তে পড়তেদশ বছর বয়সে্র কিশোর আমি  তখন কি আর বুঝি?  কিন্তু কেন যেন কবিতাটি আমাকে মুগ্ধ করে ফেলেছিল সেই সময়ে আমি সেই কিশোর  বয়সে ভাবতেছিলাম যদি আমি মরে যাই তাহলে কি আজকের এই ধান ক্ষেতের বক,মাছরাঙ্গা,বালিয়া হাঁস  হয়ে ফিরে আসবো আবার পৃথিবীতে? আমার সেদিন কান্না পেয়েছিল। হয়তো কবিও তেমনটি ভেবে অমন অমর কবিতা লিখেছিলেন তার লেখার রূপ-রস-গন্ধ-সাহিত্য দিয়েকবিকে বেশ কিছুকাল মত্যু ভয় তারা করেছে বলে জানা যায়তাই  হয়তো এমন করুণ কবিতা তিনি লিখতে পেরেছেন
কবি জীবনানন্দ দাশ আরেক জায়গায় অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে কবিতায় লিখেছেন,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশী আজ চোখে দেখে তারা;
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া

আহ!! কি চমৎকার কবির খেয়াল, কি বাস্তব সত্য কথার জনক কবি
বাংলার প্রতিটি পাঠকের একবার করে হলেও জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়া উচিৎতার কবিতা আজ বংলা ছাড়াও ইংরেজী ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ হচ্ছেচিদানন্দ দাশগুপ্ত, বুদ্ধদেব বসু, থেকে শুরু করে  বিদেশী ক্লিনটন সিলি, জো উইন্টরের মত কবি সাহিত্যিকরা জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়ছেন,লিখছেন, অনুবাদ করছেন আজ কোথায়  উঠে গেছে জীবনানন্দের কবিতা কি বিশ্বয়!!!
কবি জীবনানন্দ দাশের মাতা কুসুমকুমারী দাশও একজন কবি ছিলেনবাল্যকাল থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেনআমরা অনেকেই জানি সেই বিখ্যাত
আদর্শ ছেলে" কবিতাটি

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
 কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে 
কবিতাটি কবি জীবনানন্দ দাশের মায়ের লেখা একটি কবিতা  কবি জীবনানন্দ দাশ  ১৯৫৪ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ অক্টোবর  কোলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম  দুর্ঘটনায় আহত হন। তার  ঊরুর হাড় ও পাঁজরে হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিলগুরুতরভাবে আহত অবস্থায় হাসপাতালে  ভর্তি্  হন এবং ১৯৫৪ সনের ২২শে অক্টোবর  রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ফজলুর রহমান
সৌদি আরব
১৭/১১/২০১৬


Fazlur Rahman
0534580722|0562998047|
Email:frahmanapple@yahoo.com|
Twitter:@Frahmantwittman|
www.fazlupedia.blogspot.com|Skype:frahman67 







No comments:

Post a Comment