Monday, May 1, 2017

Poet Khan Mohammad Moinuddin (কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন)

"ঐ দেখা যায় তাল গাছ
ঐ আমাদের গাঁ,
ঐ খানেতে বাস করে
কানা বগীর ছা"............
---খান মুহম্মদ মঈনুদ্দিন
কবিতাটি লিখেছেন কবি খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন। তিনি একজন কবি, সাহিত্যিক, লেখক। তিনি ১৯০১ সালের ৩০শে অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার চারিগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। (চারিগ্রাম অগ্রণী ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংক বিল্ডিং ঘেঁষে পূর্ব পাশের(কালু মিয়ার চা এর দোকান) প্লটই কবি খান মুহাম্মদ মইনুদ্দিনের বাড়ী। এখন সম্ভবত বাড়ীটি বিক্রী হয়ে গেছে।
তার বাবার নাম মুহম্মদ মমরেজ উদ্দীন খান ও মায়ের নাম রাকিবুন নেসা খানম। পিতা-মাতার চার ছেলে দু'মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম সন্তান। মা-বাবা আদর করে ডাকতেন "হিরু মিয়া" ।
মঈনুদ্দীনের বাবা মমরেজ উদ্দীন নিজ গ্রামের একটি পাঠশালায় শিক্ষকতা করতেন। বাবার কাছে এই পাঠশালায় মঈনুদ্দীনের লেখাপড়ার হাতে খড়ি। মঈনুদ্দীন পড়াশোনায় ছিলেন খুবই মনোযোগী।
শৈশবের পর পরই কবি পিতা মাতাকে হারান। তখন কবির বয়স মাত্র বার বছর। কবির পূর্বপুরুষরা তেমন কোন ল্যান্ড প্রপার্টি অথবা অন্য কোনো সহায় সম্পদ রেখে যাননি। যার ফলে অল্প বয়সেই কবিকে জীবিকার সন্ধান করতে হয় এবং তিনি চলে যান কলকাতা। সেখানে গিয়ে পুস্তক-বাঁধাই কর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ছোটবেলায় বই পড়ার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল কবি মঈনুদ্দীনের। নতুন বইয়ের গন্ধে আর ছড়ার ছন্দের ঝংকারে উৎফুল্ল হয়ে ওঠতেন। একবার কলকাতায় এসে তিনি নিজ হাতে বই বাঁধই করে সারি সারি ভাবে সাজিয়ে রাখেন সারা ঘর ভরে। আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে বই খুলে চোখ বুলান, গন্ধ শুকেন। নতুন বইয়ের গন্ধে মন আনন্দে ভরে ওঠে।
মঈনুদ্দীন একাকী মনে ভাবতে লাগলেন কবি হতে হলে ভাল লেখাপড়ার প্রয়োজন। সেই চিন্তা মনে পোষণ করে ভর্তি হলেন নৈশ বিদ্যালয়ে। দিনে কারখানার কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন আর রাতের বেলায় বই হাতে স্কুলে পড়তে যান। এই সময় বালক কবি মঈনুদ্দীনের সঙ্গে পরিচয় হয় একই মহল্লার ছাত্র খন্দকার আবদুল মজিদ নামে এক ছেলের সঙ্গে। আবদুল মজিদ তিনিও ছিলেন একজন সাহিত্য সেবক। সাহিত্য নিয়ে আলাপ আলোচনায় একসময় দু'জন ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। দু'বন্ধু মিলে রাত জেগে হাতে লিখে প্রকাশ করেন 'মুসাফির' নামে একটি দেয়াল পত্রিকা। এই দেয়াল পত্রিকা প্রকাশের পর মঈনুদ্দীন আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তারপর তিনি তার লেখা পাঠাতে লাগলেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। ১৯২১ সালে তার লেখা "খোদার দান" নামে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয় মাসিক "সহচর" পত্রিকায়। পত্রিকার পাতায় ছাপাক্ষরে নিজের নাম দেখে কিশোর কবি আনন্দে হয়ে পড়েন আত্মহারা।
মঈনুদ্দীন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখতে থাকেন এবং কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে দেখা করে পরিচিত হতে থাকেন। এমন করে একবার দৈনিক "নবযুগ" পত্রিকা অফিসে গিয়ে বিদ্রোহী কবি নজরুলের সঙ্গে দেখা করে কথাবার্তা বলে খুব খুশী হন মঈনুদ্দীন। নজরুলের কাছে অনুপ্রেরণা পেলেন। প্রথম দেখেই নজরুলের কথা-বার্তা, চলন-বলন, পোশাক-আশাক সবকিছুই ভাল লাগে মঈনুদ্দীনের। কবি নজরুলকে ভালবেসে অনুকরণ করতে লাগলেন মঈনুদ্দীন। শুধু নজরুলের ব্যবহারিক বিষয়বস্তু অনুকরণ করেননি, মঈনুদ্দীন তার লেখালেখির বিষয়-আশয়ও নজরুলকে অনুসরণ করে লিখতে শুরু করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে কলকাতা কর্পোরেশন শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি কলকাতা কর্পোরেশন ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। বিশ বছর সেখানে কাজ করেন। শিক্ষকতাকালীন তিনি শিশুদের জন্য কিছু লেখালেখির প্রয়োজন মনে করেন।
তিনি ১৯২৩ সালে কবি মঈনুদ্দীন সাপ্তাহিক মুসলিম জগত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন।
৫০ ও ৬০-এর দশকে শিশুতোষ সাহিত্য রচনা করে প্রচুর সুনাম অর্জন করেন। কবির লেখা "কাঁনা বগির ছা" কবিতাটি বাংলাদেশের শিশুদের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং "যুগশ্রেষ্ঠ নজরুল" নামক জীবনীটির জন্য তিনি বহুলভাবে সমাদৃত। পত্রিকায় "বিদ্রোহ" শীর্ষক একটি সম্পাদকীয় প্রকাশের দায়ে তাঁকে ছয় মাস কারাভোগ করতে হয়। হুগলি জেলখানায় থাকাকালীন তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর মুহম্মদ মঈনুদ্দীন ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকায় "আলহামরা লাইব্রেরি" নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশ করতেন।
কবি মঈনুদ্দীনের রচিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মুসলিম বীরাঙ্গনা (১৯৩৬), আমাদের নবী (১৯৪১), ডা. শফিকের মোটর বোট (১৯৪৯), খোলাফা-ই-রাশেদীন (১৯৫১), আরব্য রজনী (১৯৫৭), বাবা আদম (১৯৫৮), স্বপন দেখি (১৯৫৯), লাল মোরগ (১৯৬১), শাপলা ফুল (১৯৬২)। তিনি অনেক কবিতা, গল্প ও উপন্যাস লিখেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কবিতা- পালের নাও (১৯৫৬), হে মানুষ (১৯৫৮), আর্তনাদ (১৯৫৮); উপন্যাস- অনাথিনী (সহচর পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত, ১৯২৬), নয়া সড়ক (১৯৬৭); ছোটগল্প- ঝুমকোলতা (১৯৫৬)। তিনি যুগস্রষ্টা নজরুল (১৯৫৭) শিরোনামে একটি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন।
১৯৬০ সালে "যুগশ্রেষ্ঠ নজরুল" বইটির জন্য তিনি ইউনেস্কো পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৬০ সালে কবি শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তিনি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেন।
১৯৮১ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি কবি মঈনুদ্দীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 ফজলুর রহমান, সৌদি আরব।
Cell Phone:00966534580722
Email: frahmanapple@yahoo.com
E: rahmanmedical.hall89@yahoo.com
Twitter:@Frahmantwittman

No comments:

Post a Comment